আওয়ামী লীগের কৌশল সরকারের বৈধতা, বিএনপির গণরায়
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম সংসদ নির্বাচন ও নবগঠিত সরকারের পক্ষে মোটামুটিভাবে বিদেশি সমর্থন আদায়ের পর উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির কাছ থেকে সরকারের বৈধতা নিতে কৌশল গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো এবং নতুন সরকারকে অবৈধ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবির গণরায় হিসেবে উপজেলা নির্বাচনকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপকভাবে বিজয়ী হয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে সেই উদ্যমকে সরকার পতন আন্দোলনে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, সরকারকে মৌন বৈধতা দিয়েই নির্বাচনে এসেছে বিএনপি। চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে সরকারকে বৈধতা দিতে বাধ্য হবে বিএনপি। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের পর দেশে ও দেশের বাইরে সরকার গত নির্বাচনের বৈধতা পেলেও দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এখনও সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রকাশ্য জনসভা ও সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন সরকার অবৈধ।
কিন্তু বিএনপির মুখ দিয়ে সরকারকে বৈধ বলাতে নানা তৎপরতা ও কৌশল গ্রহণ করতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। কৌশলের অংশ হিসেবে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক অমীমাংসিত বিষয়গুলো মিটমাট করতে হলে বিএনপিকে আগে সরকারকে বৈধ বলে আখ্যায়িত করতে হবে এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে বিএনপি নেতারা জানান, দলের তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন এক বিষয় নয়। কেন্দ্রীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন তদারকি করা হলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ নেই। অন্যদিকে অধিকাংশ উপজেলায় বিএনপি নেতাদের নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে সরকারকে অবৈধ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনকে গণরায় হিসেবেই দেখতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে.জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সঙ্গে সরকারকে বৈধতা দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক তফাৎ। উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে সরাসরি রাজনৈতিক কোনো ইনভলবমেন্ট নেই।
জেনারেল মাহবুবুর আরও বলেন, যেহেতু উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সেহেতু এ নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে থাকে আলাদা উৎসাহ ও আগ্রহ। তারা নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তেই এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকেন। এখানে দলীয়ভাবে তেমন কোনো প্রভাব রাখা হয় না।
শিল্পমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপিকে এ দেশে রাজনীতি করতে হলে নাকে খত দিয়ে করতে হবে। বর্তমান সরকারের বৈধতা কেউ স্বীকার না করলে তাদের সঙ্গে আলোচনা বা সমঝোতা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, সরকারকে বৈধতা দিয়েই উপজেলা নির্বাচনে এসেছে বিএনপি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, আলোচনা বা সংলাপ, ভবিষ্যৎ নির্বাচন সবকিছুই হতে পারে কেবল সরকারকে বৈধতা দিয়ে। সরকারের এ শর্ত মেনে নিয়েই এগুতে হবে বিএনপিকে। তা ছাড়া আপাতত এ সব ইস্যুর সমাধানের পথে যাবে না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির সঙ্গে যেকোনো ইস্যুতে আলোচনা-সমঝোতায় যাওয়ার আগে বিএনপির কাছে বৈধতা চায় সরকার। তারপর মীমাংসার পথে হাঁটবে আওয়ামী লীগ। সরকারের কৌশল এ সরকারকে বৈধ বলতে বাধ্য করা হবে বিএনপিকেও।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, সরকারের কাছ থেকে বিএনপিকে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আগে সরকারকে নীতিগতভাবে মেনে নিতে হবে। দ্বৈতনীতি পরিহার করতে হবে। সরকারকে অবৈধ বলে দাবি আদায় করবে এটা হতে পারে না। সরকারকে বৈধ বলেই দাবি উত্থাপন করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, সরকারকে অবৈধ বলে দাবি আদায় করা যাবে না। দাবি আদায় করতে হলে আগে সরকারকে বৈধ হিসেবে মেনে নিতে হবে বিএনপিকে। তারপর দাবি-দাওয়া উত্থাপন করতে হবে। আমরা আশা করছি, বিএনপি অচিরেই সরকারকে সমর্থন দেবে। পরে রাজনৈতিক মীমাংসার ব্যাপারে আলোচনা হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপি সরকারকে মেনে নিয়েই উপজেলা নির্বাচনে আসছে। মৌখিক স্বীকৃতি না দিলেও তারা সরকারকে মেনে নিয়েছে। তারপরও প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে দশম সংসদের বৈধতা আদায় করার কৌশল অব্যাহত আছে। সরকার বৈধতা আদায়ের কৌশলে অনেকখানি এগিয়েছেও। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে এসে সরকারের বৈধতার বিষয়ে মৌন সম্মতি দিয়েছে। একাদশ সংসদ নিয়ে কথা বলার আগে প্রকাশ্যে বৈধতা দিয়ে আসতে হবে এটা আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই অবৈধ বলার সুযোগ নেই। তাদের প্রশ্ন, অবৈধ হলে এই সরকারের কাছে বিএনপি কীভাবে সংলাপ এবং নির্বাচনের দাবি জানায়? আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা করতে হলে আগে বৈধতার প্রশ্ন আসে।
আর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বর্তমান সরকারকে মেনে নিলেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে। অন্যথায় নয়। সরকারের বৈধতার প্রশ্নে বিএনপিকে আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সরকারকে বৈধ বলে মেনে নিয়ে বিএনপি কোনো প্রস্তাব দিলে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তার আগে নয়।
(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এইউএ/এমডি/সা/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)