আল হেলাল শুভ, দ্য রিপোর্ট : ব্যবসায়ীদের আশা ও নিরাশার মধ্য দিয়ে পর্দা নামল ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার। পণ্যের পরিচিতির জন্য এবারের মেলা বেশ কার্যকর হলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী জানালেন তাদের বিক্রি ভালো হয়নি। এদিকে, শেষ সময়ে বিদেশি পণ্যের দোকানগুলোতে বেশ ভিড় দেখা যায়। সস্তায় জিনিস পাওয়ার আশায়ও শেষ সময়ে কেউ কেউ মেলায় গেছেন। এ জন্য বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন ক্রেতারা।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুরে দীর্ঘ এক মাসের মেলার সমাপ্তি টানা হয়। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সোমবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

রাত ৮টা থেকে মেলার বিভিন্ন অংশের মাইক থেকে ভেসে আসে রবীন্দ্র সঙ্গীতের মধুর সব গানের সুর। মেলার প্রচার কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা মামুন-উর-রশিদ জানান, ১০টার দিকে মেলার সব কার্যক্রমের ইতি টানা হবে। এ জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সুর বাজানো শুরু হয় রাত ৮টা থেকে। মেলার শেষ মুহূর্তেই এই সুর বাজানো হচ্ছে বলেও জানালেন সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেকজন প্রচার কর্মকর্তা।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার ভিড়ে শেষ মুহূর্তে বিক্রেতারা বেশ ব্যস্ত। তবুও বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর মুখে হাসি ফোটেনি। প্রত্যাশা অনুসারে ব্যবসা করতে না পারাই এর মূল কারণ। তবে শেষ সময়ে এসে কিছু ছাড়ে জিনিস কিনতে পেরে বেশ খুশি ক্রেতা সাধারণ। অনেক বিক্রেতাকে দরকষাকষি করতেও দেখা যায়।

মেলায় বেশ কয়েকটি প্যাভিলিয়নে কথা বলে জানা যায়, বিক্রি খুব কম হয়েছে। বিক্রিতে প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে এমন দোকানির সংখ্যা খুব অল্প। এই অল্পসংখ্যকের মধ্যে রয়েছে কিছু ব্র্যান্ডের পণ্যের দোকান। এ ছাড়া শুধুমাত্র পণ্যের ব্র্যান্ডিং করতে এসেছেন এমন কিছু দোকানদারও জানালেন তাদের সন্তুষ্টির কথা। যারা ব্র্যান্ডিং এর পাশাপাশি বিক্রির লক্ষ্য নিয়ে এসেছেন, তাদের অধিকাংশই বেশ নিরাশ। তবে আগামী ২০তম মেলায় সেই অপূর্ণতা পুষিয়ে নেবেন- এমন আশাও ব্যক্ত করলেন কেউ কেউ।

বিডি টেকনোলজির উপদেষ্টা জাকির হোসেন বলেন, পণ্যের ব্র্যান্ডিং ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। তা মোটামুটি পূরণ হয়েছে।

মেলা শেষের দুই ঘণ্টা আগে কম দামে পণ্য ক্রয়ের আশায় মেলায় ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। ক্রেতাদের অনেককে শেষ সময়ে বিদেশি পণ্যের স্টলগুলোতে ঘুরতে দেখা যায়। বিদেশি পণ্যের দোকানগুলোর সামনে গিয়ে দেখা যায় অনেকে কেনাকাটায় ব্যস্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কসমেটিকস পণ্য পারসনির প্যাভিলিয়নে ফার্মগেট থেকে এসেছেন রিফা। তিনি জানালেন, তিনি বিদেশি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস ব্যবহার করেন। এ জন্যই শেষ সময়ে মেলায় আসা। একই কথা জানালেন মোহাম্মদপুর থেকে ‘দিল্লি এলুমিনিয়ামে’ পণ্য কিনতে আসা হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, দেশীয় পণ্যের চেয়ে এটি দেখতে সুন্দর ও টেকসই।

এদিকে, বিদেশি পণ্যের দোকানগুলোও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বলে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ভারতীয় প্যাভিলিয়নের ৪৪ নাম্বার স্টলের একজন বিক্রয় কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৪০ লাখের মতো লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মেলায় স্টল দিলেও তারা ২০-২৫ লাখের মতো বিক্রি করতে পেরেছেন।

মেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন বিক্রি কম হওয়ার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাই দায়ী। তবে অনেকে জানান, মেলায় পণ্য বিক্রিই আসল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হলো পণ্যের পরিচিতি।

তারা আরও জানান, এক মাসে তাদের পণ্যের অনেকটা পরিচিতি হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে সারা বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ইতিবাচক থাকবে- এমন আশাতেই মেলার সমাপ্তি টানছেন তারা।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচএস/এমডি/সা/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)