আহমদুল হাসান আসিক, দ্য রিপোর্ট : দুই বছরেও রহস্যভেদ হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের। গোয়েন্দা পুলিশের ব্যর্থতার পর আদালতের নির্দেশে তদন্তভার গ্রহণের ২০ মাস পেরিয়ে গেলেও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কোন কূল-কিনারা করতে পারেনি র‌্যাব। আর এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই বছর আগে তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এখনও হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও আশা ছাড়েননি। তিনি বলেন, এখনও সময় শেষ হয়ে যায়নি। চেষ্টা করলে হয়তো হত্যাকারীদের খুঁজে বের করা যাবে।

তিনি আরো বলেন, হত্যারহস্য উন্মোচনে সবাইকে আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে এখনও এর রহস্য উন্মোচন করা সম্ভব।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, দুই বছর পার হতে চললেও হত্যাকাণ্ডের দায়িত্বে থাকা র‌্যাব উদ্যোগী হয়ে নিহতের পরিবারকে কিছু জানায়নি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে ভাড়া বাড়িতে খুন হন সাংবাদিক দম্পত্তি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।

ঘটনার দিন সকালে ঘুম ভাঙার পর বাবা-মায়ের শোয়ার ঘরে তাদের রক্তাক্ত লাশ দেখে নানীকে খবর দিয়েছিল তাদেরই ৬ বছরের ছেলে ফাহিম সারোয়ার মেঘ।

ওইদিনই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এমনকি ঘটনার পরদিনও সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেভাবে হোক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার হোতাকে ধরা হবে।

ঘটনার পর আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার গ্রহণ করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ১৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি দেশবাসীকে ইতিবাচক খবর দিতে পারব বলে আশা করছি।’

১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তৎকালীন উপ-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সন্দেহের তালিকায় কয়েক পেশার লোক রয়েছে, যাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত হলেই গ্রেফতার করা হবে খুনিদের।

কিন্তু তদন্তের দুই মাসের মাথায় আদালতে ব্যর্থতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় গোয়েন্দা পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব নেয় র‌্যাব। দায়িত্বভার নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ১২৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও খুনের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি।

২০১৩ সালের অক্টোবরে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৮ জনকে চিহ্নিত করে ৭ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনই হলেন চিকিৎসক নেতা ডা. নারায়ণ চন্দ্র দত্ত নিতাই হত্যা মামলার আসামি।

তাদের মধ্যে তানভীর রহমানকে রুনির কথিত পারিবারিক বন্ধু বলে দাবি করা হয়। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান দাবি করেন, তানভীর তাদের পারিবারিক বন্ধু নয়। তিনি তাকে কখনো দেখেননি এবং বোনের কাছে তার নামও কখনো শোনেননি বলে দাবি করেন।

৮ জনের মধ্যে বাকি একজন সাগর-রুনির বাড়ির পাহারাদার হুমায়ুন ওরফে এনামুলকে গ্রেফতার করা হয় ২০১৩ সালের ৯ নভেম্বর।

এছাড়া র‌্যাব তদন্তভার গ্রহণের পর সন্দেহভাজন ১৬ জনের ডিএনএন নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়।

সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের নমুনাও পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ ছাড়া আলমাত হিসেবে জব্দকৃত ছুরি ও পোশাকের নমুনাও পাঠানো হয়।

তবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখনো কিছু প্রতিবেদন তৈরি বাকি আছে। এ বিষয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সাগর-রনির হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি বেদনাদায়ক এবং স্পর্শকাতর। র‌্যাব সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করছে বলেও তিনি দাবি করেন।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। তাই এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।

(দ্য রিপোর্ট/এএইচএ/জেএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)