দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। তমুদ্দিন মজলিস ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ সে দিন ভাষার দাবিতে প্রতিবাদ দিবস পালন করে। সে দিনের ধারাবাহিকতায় ভাষার দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়।

১৯৫১ সাল পর্যন্ত আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারের দমননীতি ও সংগঠকদের মধ্যে ডান-বাম বিভক্তি ঘটে এ সময়ের মধ্যে। কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ভাষার দাবিটি এই কয়েক বছরে এই অঞ্চলের মানুষের সাধারণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে দুই পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক ও মনোস্তাত্ত্বিক দূরত্বের স্মারক আকারে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ বিরোধী নতুন মূল্যায়ন লক্ষ্য করা যায়। যার সূত্র ধরে পূর্ব পাকিস্তান নতুন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রবেশ করে।

১৯৪৮ পরবর্তী বছরগুলোতে ১১ মার্চের সেই প্রতিবাদ দিবসকে একটা মাইলফলক হিসেবে স্মরণ করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। ১৯৪৯ সালের ১১ মার্চ পালন করার চেষ্টা করে ছাত্র ফেডারেশন। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে ফেডারেশন কর্মীরা রাস্তায় দাঁড়াতে পারেনি। এ ছাড়া জনসমাগমও ছিল কম। ছোট একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেন নাদেরা বেগম, তকিউল্লাহ, নাসির আহমদ প্রমুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন বাহাউদ্দিন চৌধুরী, ইকবাল আনসারি খান হেনরি, মৃণালকান্তি বাড়ড়ি, আবদুস সালাম ও সৈয়দ আফজল হোসেন।

পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১১ মার্চ আন্দোলন দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। ওই দিন একটি ছাত্রসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ছাত্রনেতা আবদুল মতিন হন কমিটির আহ্বায়ক। চেষ্টা করা হয় রাষ্ট্রভাষার দাবিকে আবারও সক্রিয় করে তোলার। নানা কারণে আন্দোলনের পরিস্থিতি তৈরি করা যায়নি। কিন্তু পরবর্তী বছর এই কমিটি জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলে। মূলত, আটচল্লিশোত্তর এই বছরগুলো ছিল রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার চূড়ান্তক্ষণের প্রস্তুতিপর্ব।

অন্যদিকে রাজনৈতিক মোড় পরিবর্তন সহজে বোঝা যায় আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন প্রক্রিয়ায়। বিভিন্ন ন্যায্য দাবি-দাওয়া পূরণে সরকারের অস্বীকৃতি এবং ভাষার ক্ষেত্রে বিদ্বেষমূলক নীতির কারণে দলটির একটি অংশ নিয়ে মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জন গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামসুল হক এবং যুগ্ম-সম্পাদক নিযুক্ত হন শেখ মুজিবুর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদ। একই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানেও পীর মানকি শরীফের নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়।

পরবর্তীকালে এই দুই দল একীভূত হয়ে পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এর আহ্বায়ক নিযুক্ত হন। ভাসানী ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত ৮ বছর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ভাষা আন্দোলনসহ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দান করেন। পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানী রাজনৈতিক নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী মুসলিম লীগ ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি পার্লামেন্টেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। সবশেষে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখবে।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)