কুরিয়ার সার্ভিসমূহকে মোবাইল ব্যাংকিং আইনের আওতায় আনার সুপারিশ
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দেশে ব্যবসায়ত কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহকে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা ও আইনের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ ইতোমধ্যেই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ওই সুপারিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত ‘এজেন্ট ব্যাংকিং গাইড লাইন’ এ কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা ও আইনের আওতায় এদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু এটা করা যথাযথ হবে বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্তমানে পরিচালিত ‘রেমিট্যান্স সার্ভিস’ বিষয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতি গ্রহণ এবং মানি ট্রান্সফারের প্রতিটি পর্যায়ে ট্র্যাক ও ট্রেসিং-এর মাধ্যমে মনিটরিং নিশ্চিত করার জন্য একটি পরি-কাঠামো ও আইনগত ভিত্তি তৈরিরও তাগিদ দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
দেশের কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহ বর্তমানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীন লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে উল্লেখ করে সুপারিশ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহ রাউন্ড দি ক্লক জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ১০০টি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কাজ করছে এবং দেশব্যাপী এদের ৬৪ হাজার নিজস্ব এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। এমতাবস্থায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাদ দিয়ে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন সম্ভব নয়।
কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানসমূহকে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা ও আইনের আওতায় আনা হবে কি না- জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিতব্য এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে বিষয়টি পর্যালোচনাপূর্বক এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়।
প্রসঙ্গত, কার্যক্রম শুরু করার আড়াই দশকেরও বেশি সময়ের পর ২০১০ সালে দেশের বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘পোস্ট অফিস (সংশোধন) আইনের আওতায় আনা হয় এবং পরবর্তী সময়ে ‘মেইলিং অপারেটরস ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা’ প্রণয়ন করা হয়।
দেশের অভ্যন্তরে টাকা-পয়সা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য প্রথম বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮২ সালে। তখন ‘সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস’ প্রথম এ উদ্যোগ নেয়। যদিও তখনও এর কোনো আইনগত ভিত্তি ছিল না। এর আগে বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে টাকা-পয়সা স্থানান্তরের এক ধরনের ব্যবসায়িক লেনদেন চালু ছিল। কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ তাদের এ সার্ভিসটি বন্ধ করে দিলে পরে বিকল্প উদ্যোগ হিসেবে এটা চালু হয়।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকে দেশে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যাপকতা লাভ করে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ট্রেড অর্ডিন্যান্স লাইসেন্স’-এর আওতায় কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করে।
পরবর্তী সময়ে ২০০৪-০৫ সালের দিকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ প্রেরণ ও লেনদেন এবং এ সব অর্থ বিভিন্ন ধরনের অ-নৈতিক কাজে ব্যবহারের বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানি লন্ডারিং বিভাগও এ সময় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ ও লেনদেনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘এসএ পরিবহন’ নামক একটি কুরিয়ার সার্ভিসের টাকা পরিবহনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রতিষ্ঠানের ‘লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না’ এ মর্মে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কুরিয়ার সার্ভিস মালিকদের সংগঠন ‘কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (সিএসএবি) এর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে। বিষয়টি কিছুদিন ঝুলে থাকার পর উচ্চ আদালত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দেন। যেটি এখনও বহাল রয়েছে।
(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এনডিএস/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)