এডিপির বাস্তবায়ন ৫ শতাংশ কমেছে
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত সাত মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৫ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরে (জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত) এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ হার ছিল ৩৮ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রাথমিক হিসাব থেকে মঙ্গলবার এ জানা গেছে।
চলতি অর্থবছরের সাত মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট ব্যয় করতে পেরেছে ২১ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার ২৭৮ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো এ সময়ের মধ্যে ব্যয় করেছে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা। তবে এটি মোট ব্যয়ে দেখানো হয়নি।
গত অর্থবছরের একই সময়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মোট ব্যয় করেছিল ২১ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৪ হাজার ২২৯ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৬ হাজার ৮১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এর আগে বলেছিলেন, রাজনৈতিক কারণে এডিপির বাস্তবায়ন এখনও অনেক পিছিয়ে। একটু কষ্ট হলেও সবাই মিলে কাজ করলে এটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এবং সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই কাজও শুরু হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এডিপি কাটছাঁট নিয়ে সবাই মাথা ঘামাচ্ছেন কিন্তু আমরা চাই সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আরও বাড়ুক।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এডিপি বাস্তবায়নে ৯টি বাধা চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এগুলো হচ্ছে, নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, মন্ত্রণালয়ের চাহিদা ও এমটিবিএফ-এর মধ্যে পার্থক্য, প্রকল্পের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি ও বাজেট নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা কমিশনের অপর্যাপ্ত ক্ষমতা, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) ও টেকনিক্যাল প্রকল্প প্রস্তাবে (টিপিপি) গুণগত মানের দুর্বলতা, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও এডিপির মধ্যে দুর্বল সংযোগ, প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে আইএমইডির সীমিত কর্তৃত্ব, ঘনঘন প্রকল্প সংশোধন, কর্মকর্তাদের ঘনঘন বদলি এবং দুর্বল আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও জবাবদিহিতা।
সূত্র জানায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য মোট ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪২ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯ হাজার ৪২১ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে অর্থবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর সঙ্গে এবারই প্রথম স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৮ হাজার ১১৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা যোগ হওয়ায় এডিপির আকার বড় হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে এডিপির মোট বরাদ্দ বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ছাড়া এ হার বেড়েছে ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণেই গত কয়েক মাসে এডিপির বাস্তবায়ন কমেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে আগামী দিনগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়বে বলে আশা করা যায়।’
শামসুল আলম আরও বলেন, ‘সম্পদ প্রাপ্তি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতার বিষয়গুলো বিবেচনা না করেই অনেক সময় প্রতিবছর এডিপিতে নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন মেয়াদকাল বৃদ্ধি পায়, যা প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়কে বৃদ্ধি করে। এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাই হচ্ছে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধি এবং অপর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’
চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ১৭৬টি। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প ১ হাজার ৪৬টি (বিনিয়োগ প্রকল্প ৮৮৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২৯টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ৩০টি) এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নের ১৩০টি প্রকল্প রয়েছে। তবে বরাদ্দসহ প্রকল্পের মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৫০টি (বিনিয়োগ প্রকল্প ৩৪টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৬টি)।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/একে/এইচএসএম/ এনআই/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)