স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় আলাদা একটি বিভাগের অধীন থাকতে চায় পুলিশ বাহিনী। আসন্ন ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৪’তে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে এই দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে। একইসঙ্গে দাবি আদায়ে সরকারের আস্থাভাজন পুলিশ কর্মকর্তারা দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৫ বছর ক্ষমতায় বহাল থাকা এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সদস্যদের উচ্ছেদের জন্য রাজধানী ঢাকায় পুলিশের ‘রেসকিউ শাপলা’ অভিযান সফল, ১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’, সর্বশেষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরের সহিংসতা প্রতিরোধের প্রতিদান চাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন আলাদা বিভাগের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পক্ষে। কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুলিশ কোনো কাজ দ্রুতগতিতে করতে পারছে না। পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম ক্রয়, পদোন্নতি, বদলিসহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিতে হয়। একদিনের কাজের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পুলিশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

ডিএমপির এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পুলিশ বাহিনীর জন্য আলাদা সচিব দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অধীনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পুলিশের মধ্য থেকে এ বিভাগের সচিব নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানানো হবে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে। এ ধরনের উদ্যোগ ছাড়া পুলিশের কাজের গতি বাড়বে না। এ জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) আদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ ফোর্সেস ডিভিশন (পিএফডি) করারও প্রস্তাব করা হবে। এতে পুলিশের কাজে গতি আসবে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার দ্য রিপোর্টকে বলেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘পুলিশ সপ্তাহ’ শুরু হচ্ছে। প্রতিবছরের মত এবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে। এরমধ্যে একটি দাবিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ সপ্তাহের আগেই ওইসব বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছে না। পুলিশ সপ্তাহের সময় দাবির বিষয়টি সবাই জানতে পারবেন বলেও জানান আইজিপি।

পিপিএমজন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে ফোন

‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৪’ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) দিতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে ফোন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন উর রশিদকে পিপিএম পদক দেওয়ার জন্য এ ফোনটি এসেছে এক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে। এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তারা বিব্রতবোধ করছেন। এ ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ।

পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ‘পুলিশ সপ্তাহ ২০১৪’ উপলক্ষে পিপিএম ও বিপিএম পদকে ভিন্নচিত্র দেখা যাবে। এ লক্ষ্যে পিপিএম ও বিপিএম পদক মনোনীতদের তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহিদুল হককে প্রধান করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘অন্যসব বছর যারা সাহসিকতা ও ভাল কাজে অবদান রেখে পিপিএম অথবা বিপিএম পদক পেয়েছেন তাদের এবার পদক দেওয়া হবে না। পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে কমবেশি সবাইকে মরনোত্তর পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। একইসঙ্গে সহিংসতায় গুরুতর আহত ব্যক্তিকেও পদক দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃতদের তালিকায় লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন উর রশিদের নাম নেই। এ খবর পেয়ে হারুন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ একটি মহলে যান। সেখান থেকে বিশেষ ব্যক্তিকে দিয়ে এক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে ফোনে কথা বলান। তার আলাপের বিষয় ছিল ডিসি হারুনকে পিপিএম পদক দেওয়ার সুপারিশ। ডিসি হারুনের এ কাণ্ডে অনেক পুলিশ সদস্য তার ওপর ক্ষুব্ধও হয়েছেন।

এ বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন উর রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘পুলিশ সপ্তাহে পদক দেওয়ার বিষয়টি এলে আমার নাম আলোচনায় আসে। আমাকে নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আমার জন্য ফোন করবেন কেন।’

(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/ এইচএসএম/এনআই/ ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)