দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ চিহ্নিত করতে শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীরা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুললেও ঢাকা মহানগরের নেতাদের সরকারের সঙ্গে আঁতাত ও কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন অনেকে। নানা অভিযোগ, আলোচনা-সমালোচনার পর আন্দোলন-সংগ্রামের মূল জায়গা ঢাকা মহানগর কমিটিকে পুনর্গঠন করার কাজে হাত দিয়েছেন বিএনপি প্রধান।

এরই ধারাবাহিকতায় মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির পর খালেদা জিয়ার টার্গেট ছাত্রদল ও যুবদল। শিগগিরই তিনি দলের এ প্রধান অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ভেঙে নতুন নেতৃত্ব দিয়ে পুনর্গঠন করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থতার জন্য প্রধানতম দায়ী হচ্ছে মহানগর বিএনপি। এর সঙ্গে দায় রয়েছে বিএনপির প্রধান অঙ্গ সংগঠন যুবদল ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের। যদিও বিগত আন্দোলনে দলের তালিকাভুক্ত ১১টি অঙ্গ সংগঠনের কোনোটিই সফলতার পরিচয় দিতে পারেনি। অন্য সবগুলো অঙ্গসংগঠনের ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি। সোমবার রাতে মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া স্পষ্ট বলেছেন, ‘মহানগরের পরপরই ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গসংগঠনগুলোও পুনর্গঠন করা হবে। বিগত সময়ে এরা সবাই আন্দোলনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’

তিনি মহানগর নেতাদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘অনেক নেতা দিনে বিএনপি, রাতে আওয়ামী লীগ করে। তাদের সম্পর্কেও আমি অবগত।’ এ সব অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন করে খুব শিগগিরই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনায়ও বিএনপি প্রধান ছাত্রদল ও যুবদলের ওপর তার হতাশার কথা জানিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী সূত্র জানায়, যুবদল ও ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে হোমওয়ার্ক চলছে। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নেতাদের মাধ্যমে উভয় সংগঠনের নেতাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান কমিটির মধ্যে আন্দোলনমুখী দক্ষ ও যোগ্য নেতাদের আলাদা একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যুবদলের সাবেক নেতাদের মতামতও নেওয়া হচ্ছে। যুবদলের শীর্ষ নেতারা কারাগারের বাইরে থাকায় এ কমিটি ছাত্রদলের আগেই হতে পারে।

অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা আশা করছেন, ছাত্রদলের শীর্ষ তিন নেতা চলতি মাসেই মুক্তি পাবেন। তারা কারাগার থেকে বেরনোর সঙ্গে সঙ্গেই একটি বৈঠক করে নতুন কমিটি দেওয়া হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করে আন্দোলনমুখী করে তোলার। এরই অংশ হিসেবে মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।’ শিগগিরই এ সব সংগঠন পুনর্গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

যুবদল সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনে ব্যর্থতার পাশাপাশি শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে বিপর্যস্ত ও ভেঙ্গে পড়েছে যুবদল। সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে অতীতের মতো বিএনপির হাইকমান্ডের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি-এমনটা স্বীকারও করেন যুবদল নেতারা। যুবদলের কেন্দ্রের নিষ্ক্রিয়তার প্রভাব পড়ছে তৃণমূলেও। বিশেষ করে ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে মহানগর যুবদলের সব নেতাই আত্মগোপনে চলে যান। বিএনপি চেয়ারপারসন বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি যুবদল নেতাদের খোঁজখবর নিতে চাইলেও কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এরপর থেকেই তিনি যুবদলের ওপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকেও যুবদল কমিটি পুনর্গঠনের কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।

সূত্র জানায়, সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে ঝামেলার কারণে যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজেই সংগঠন থেকে সরে যেতে চাচ্ছেন। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করে তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

কমিটি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন চাইলে যে কোনো সময় যুবদল কমিটি দিতে পারেন। বিগত সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে মহানগর যুবদলের অবস্থান জেলা পর্যায়ের চেয়ে ভালো ছিল না। কিছুটা ব্যর্থতার দায় যুবদলের ওপরে আসতেই পারে। তবে যুবদলের কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। তারপরও কমিটি রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের।’

২০১০ সালের ১ মার্চ আলালকে সভাপতি এবং সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে মামুন হাসানকে সভাপতি ও এসএম জাহাঙ্গীরকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্যবিশিষ্ট যুবদল মহানগর উত্তর এবং হামিদুর রহমান হামিদকে সভাপতি ও রফিকুল আলম মজনুকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই সদস্য বিশিষ্ট মহানগর দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া ২০১ সদস্যবিশিষ্ট যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেন।

ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের মাধ্যমে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দলসমর্থিত শিক্ষকদের কাছে ক্লিন ইমেজের মেধাবী ও দক্ষ ছাত্রনেতাদের তালিকা চেয়েছেন। ইতোমধ্যেই তারা তালিকা তৈরির কাজ শুরুও করেছেন।

দলীয়ভাবেও ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমান কমিটির নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা জেলে। আমরা আশা করি, বিএনপির নীতিনির্ধারক নেতারা বেরনোর পর ছাত্রদল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আন্দোলনে সফলতা-ব্যর্থতা দুটোই আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন চাইলে যে কোনো সময় ছাত্রদল নিয়ে তার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে সভাপতি ও হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই সময় ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর সাত মাস পর ঘোষণা করা হয় ২৯১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা হওয়ার কথা ১০১। কিন্তু গঠনতন্ত্র অমান্য করে ২৯১ সদস্যের বিশাল কমিটিতে অছাত্র, বিবাহিত, ব্যবসায়ী এবং অনুগতদেরকেই স্থান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস-এমএইচ/এনডিএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)