দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : শ্রমিক অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের মানদণ্ড অনুযায়ী অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি- এ অভিযোগে বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা স্থগিতই রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছর সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে বাংলাদেশে বিশ্বের গার্মেন্টস শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে। এর দু’মাস পর গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত না করা পর্যন্ত জিএসপি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দফতরের কর্মকর্তা এরিক বিয়েল বলেন, গত মাসের শেষ দিকেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী যথেষ্ট পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক এক কমিটিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও শ্রমিক অধিকার বিষয়ক এক শুনানিতে বিয়েল এ কথা বলেন।

তবে বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকায় দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ কোটা সুবিধা জিএসপি ফিরে পেতে বেঁধে দেওয়া শর্তগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এ খবর দেয়।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর নির্মিত এক তথ্যচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে তিনি আরও বলেন, ‘বাকি শর্তগুলোও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
‘প্রাইস ট্যাগ-ই সব নয়’ নামের ওই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন বাংলাদেশের মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন নামের এক সাংবাদিক। ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজীনা।
শ্রমমন্ত্রী আরও বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে একটি শর্ত ছিল গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে পরিদর্শক নিয়োগ করা। শর্তটি পূরণে মার্চ মাসের মধ্যেই ২০০ পরিদর্শক নিয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি। তিনি দাবি করেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে সরকার শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোসহ বিশ্বমানের শ্রম পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজীনা বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে যা বিশ্বে অনেক সমাদৃত হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যেই জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া শর্তগুলো পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সংসদে এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ১৬টি শর্তের মাত্র তিনটি শর্ত পূরণ করা বাকি আছে।
ওই তিনটি শর্ত হলো- ২০০ পরিদর্শক নিয়োগ, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অনুমতিদান এবং ১৯ কারখানায় শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
গত বছর ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র তার বাজারে প্রবেশে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য নির্ধারিত জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে এবং তা ফিরে পেতে হলে ১৬টি শর্ত বেঁধে দেয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, পরিদর্শক নিয়োগের বিষয়টি মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠকে ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়েছে। সরকার চাইলে যে কোনো সময়ই একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ওই ২০০ পরিদর্শক নিয়োগের কাজটি সেরে ফেলতে পারে।
ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ীই সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমই/এএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৪)