আগুনে পুড়ল শিরীনের কপাল
আহমদুল হাসান আসিক, দ্য রিপোর্ট : শিরীন আক্তার স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন মিরপুর-২ জনতা হাউজিংয়ের পেছনের বস্তিতে। ২০ বছর আগে স্বামীকে নিয়ে ভোলা থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন জীবিকার সন্ধানে। এরপর ঢাকার বিভিন্ন বস্তি ঘুরে কয়েক বছর আগে থিতু হয়েছেন এই বস্তিতেই। নিজের মতো করে সাজিয়েছিলেন ঘরটাকে। কিন্তু আগুনে পুড়ে গেল তিল তিল করে সাজানো ঘর। শুধু ঘরই নয়, সঙ্গে পুড়ল শিরীনের কপালও।
শুধু শিরীনই নয়, এখানে প্রায় ২০০ পরিবার আজ নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে। তারা সব হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বস্তিতে আগুন লাগলে মুহূর্তের মধ্যেই পুড়ে যায় পুরো বস্তি। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ২ ঘণ্টা চেষ্টা করে আড়াইটায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিরীন জানান, স্বামী সেলিম মিয়া একটি বেসরকারি কোম্পানিতে দারোয়ানের চাকরি করেন। আর মেয়ে সাথী আক্তার মিরপুরের একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। ঘরের সঙ্গে মেয়ের স্কুলের বইগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
শিরীন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি রান্না করছিলাম। হঠাৎ দেখি আগুন লেগেছে বস্তিতে। মুহূর্তেই আগুন আমার ঘরেও পৌঁছে গেল। এরপর আমি তাড়াহুড়া করে ঘর থেকে মেয়ের বই বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে ঘরের অর্ধেক আগুনে পুড়ে গেছে। বই বের না করেই আমি বের হয়ে আসি।’
শিরীন বলেন, মেয়েটার পড়াশোনায় অনেক আগ্রহ। এত কষ্ট করে বই কিনে দিয়েছি, সেই বইগুলো পুড়ে গেল। মেয়েটাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। আমরা এখন কই যাব, সবই তো শেষ হয়ে গেল। শিরীনের প্রতিবেশী আলেয়া বেগম একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি বলেন, আমরা গরিব মানুষ, আমাদের কপালই শুধু পোড়ে।
আবুল হোসেন থাকেন এই বস্তিতেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এবারই প্রথম নয়, চার বছর আগেও এখানে আগুন লেগেছিল। বস্তিতে এমনিতে আগুন লাগেনি। কেউ ষড়যন্ত্র করে এই সরকারি বস্তিতে আগুন লাগিয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। তবে কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও আগুনের কারণ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার নিলুফার ইয়াসমীন বলেন, এখনও এর কারণ সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে তদন্তসাপেক্ষে এটা জানা যাবে।
এদিকে মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ সালাউদ্দিন খান বলেন, বস্তির ভেতর থেকেই আগুন লেগেছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হলেও কীভাবে আগুন লেগেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচএ/এএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)