দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি বলে মন্তব্য করেছেন সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিসা দেশাই বিসওয়াল। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির ‘ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচন বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতার ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

দেশাই আরও বলেন, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন। ‘গত ৫ জানুয়ারি সরকার ত্রুটিপূর্ণ একটি নির্বাচন করেছে, যাতে প্রধান দুই দলের একটি দল অংশ নেয়নি।’

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনেট কমিটির তৃতীয় দফা শুনানিতে অংশ নিয়ে মঙ্গলবার তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে তিনি আরও শঙ্কা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে অস্থিরতা থাকলে তা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

শুনানিতে নিসা দেশাই আশা প্রকাশ করেন, অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাংলাদেশে দ্রুত একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে সবার অংশগ্রহণ এবং জনগণের মতের প্রতিফলন থাকবে।

শুনানিতে শ্রমিক অধিকার, কারখানার নিরাপত্তা ও জিএসপি সুবিধার ব্যাপারে নিজ নিজ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন দুটি প্যানেলের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টায় সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট মেনেন্ডেজের সভাপতিত্বে এ শুনানি হয়।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট কমিটিতে গত তিন মাসের মধ্যে এটি তৃতীয় শুনানি।

এর আগে গত ডিসেম্বরে নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে সিনেট কমিটিতে শুনানিতে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়।

এরপর বিতর্কিত নির্বাচনের দুদিন পরই ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সংলাপ শুরুর আহ্বান জানায় কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট।

গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর দেশটি বলেছে, ভোটার ও প্রার্থীবিহীন ওই নির্বাচন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। মে-জুন মাসের মধ্যেই সব দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সমঝোতা ও শ্রমিক অধিকার পরিস্থিতি’ শিরোনামে মঙ্গলবারের এই শুনানিতে প্রথম প্যানেলে ছিলেন- দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিসা দেশাই বিসওয়াল, মার্কিন শ্রম বিভাগের কর্মকর্তা এরিখ বিয়েল, বাণিজ্য বিভাগের প্রতিনিধি লুইস ক্যারেস, এলায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান এলেন টাউসার এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আকতার। শুনানি হয়- ক্যাপিটল হিলের সিনেট ডার্কসেন ভবনে।

শুরুতেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানতে চান রবার্ট মিনেন্দেজ। উত্তরে নিসা দেশাই তার সফরের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসাতে তিনি এবং জাতিসংঘের দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো উদ্যোগ নেন। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো দলের পক্ষ নেয়নি বলেও জানান তিনি।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে সিনেট কমিটিতে আগেও শুনানি হয়েছিল। ওই কমিটির চেয়ারম্যান মিনেন্দেজ রাজনৈতিক সংকট এড়ানোর তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশের নেতাদের চিঠি পাঠান, যা শুনানির প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি তুলে ধরেন।

নিসা দেশাই বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে সহনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুত নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এরপর বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার, পোশাক খাতের অসন্তোষ এবং বাণিজ্য অবকাঠামোর ওপর আলোকপাত করেন এরিখ বিয়েল। তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে বাংলাদেশের পদক্ষেপ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্যানেলের অন্য সদস্যরা জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশের উপর মার্কিন শর্তের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেন। বাংলাদেশের বন্দর, ইপিজেডসহ পোশাক কারখানার নিরাপত্তার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার কী করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তারা।

উল্লেখ্য, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি এবং নির্বাচনে অটল আওয়ামী লীগকে সংলাপের তাগিদ দিতে ভোটের আগে ঢাকা সফর করেছিলেন নিসা দেশাই বিসওয়াল।

বাংলাদেশে বিরূপ কর্মপরিবেশের কারণে গত ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে দেয়।

শুনানিতে অংশ নিয়ে অধিকারবাদী তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে শ্রমিকের অধিকার ও ক্ষমতায়নের তাগিদ দেন।

(দ্য রিপোর্ট/টিএস/এএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)