জয়পুরহাট সংবাদদাতা : খাদ্য উদ্বৃত্ত জয়পুরহাটে এবার বাম্পার ফলন হলেও আগাম ও নাভি জাতের আলুচাষিরা পড়েছেন ব্যাপক ক্ষতির মুখে। আলু বিক্রি করতে না পেরে অনেক চাষিই হতাশ আর যারা বিক্রি করছেন দাম পাচ্ছেন খরচের চার ভাগের এক ভাগ। এমন অবস্থায় জেলার অর্থনীতিতে পড়েছে মন্দাভাব।

জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগাম আলু চাষ করে লাভের আশা করেছিলেন অনেক কৃষক। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে দাম না পাওয়ায় আলু তুলতে শুরু করেছেন দেরিতে। ততক্ষণে আলুর দাম হয়েছে প্রতিমণ ৪০ থেকে ৫০ টাকা। মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের আলু তোলার যে আনন্দ তা মিইয়ে গেছে আলুর নিম্নগামী দামে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে যে কৃষকের আলু তোলার কথা, তারা এখন আলু তুলছেন অতিকষ্টে। কেউবা খরচের টাকা তুলতে না পেরে আলু জমিতেই রেখে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে জমিতে অন্য ফসল চাষেরও সমস্যা দেখা দিয়েছে।

জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভিকনি গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, এবার তিনি চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছেন মাত্র ১৪ হাজার টাকা।

একই গ্রামের কৃষক শামছুল ইসলাম জানান, আগাম আলুতে লাভ হবে ভেবে এবার তিনি ব্যাপক লোকসান গুনেছেন। কারণ আলু না তুলতে পেরে ওই জমিতে অন্য ফসল দিতে পারেননি।

শুধু সাইফুল এবং শামছুল নন, জেলার সব চাষির একই অবস্থা। কৃষকদের তথ্যানুযায়ী, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করে পাচ্ছেন মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার হিচমী এলাকার সার ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, এ বছর আলুচাষিদের সার বাকি দিয়ে তিনি বেকায়দায় পড়েছেন। আলুর দাম কমে যাওয়ায় তিনি বাকি টাকা তুলতে পারছেন না।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর ৩৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি এবং ফলনও ভালো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আজহার আলী জানান, জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে। দাম না পাওয়ায় কৃষকরা আলু চাষে আগ্রহ হারাতে পারেন বলেও তিনি আশঙ্কা করছেন।

কৃষিভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত জয়পুরহাট জেলার কৃষকরা এবার নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়ে আলু চাষ করেছেন। শুরুতে ভালো দাম পেলেও বর্তমানে দাম না পাওয়ায় মাথায় হাত দিয়েছেন কৃষকরা। আলু চাষের খরচ তুলতে না পারায় বোরো চাষসহ অন্য ফসলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।

(দ্য রিপোর্ট/এএএম/এএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)