পঞ্চাশ সালের ঘটনাপ্রবাহ
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্তক্ষণের আগে বাংলার রাজনীতিতে নানা ধরনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পঞ্চাশ সালে কিছু গুণগত পরিবর্তন দেখা দেয়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা হল :
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের ধারাবাহিকতায় ওই বছরের একই দিনে ছাত্রনেতা আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টেট ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট কমিটি বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি’। পরবর্তী সময়ে কমিটি ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এপ্রিল মাসে গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেই প্রতিবাদের হাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও লাগে।
সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর এবং জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের উপায় নির্ধারণের লক্ষ্যে গঠিত বিপিসি বা দ্য বেসিক প্রিন্সিপল কমিটি অব দ্য ন্যাশনাল কন্সটিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি গণপরিষদে রিপোর্ট প্রদান করে। এই রিপোর্টে অন্যান্য প্রস্তাবনার সঙ্গে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়। এই রিপোর্ট পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আওয়ামী মুসলিম লীগ রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে। পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি রাজনৈতিক নেতারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পাশাপাশি অন্যান্য দাবি দাওয়ার রূপরেখা প্রণয়নের জন্য গ্রান্ড ন্যাশনাল কনভেশন বা জিএনসি আহ্বান করেন।
১৪ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত কমিটি অব অ্যাকশান ফর ডেমোক্রেট ফেডারেশন ঢাকায় আয়োজন করে গ্রান্ড ন্যাশনাল কনভেনশন বা জিএনসি। এতে উত্থাপিত দাবির মধ্যে রাষ্ট্রভাষার দাবিটিও ছিল।
৬ ডিসেম্বর মাওলানা আকরম খাঁর নেতৃত্বে গঠিত পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি রিপোর্ট প্রদান করে। ১৬ সদস্যের এই কমিটি আরবি হরফে বাংলা লেখার চিন্তাকে উদ্ভট বলে আখ্যায়িত করে। তারা পূর্ব পাকিস্তানের অফিস আদালতসহ শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলা ব্যবহারের সুপারিশ করে। যদিও এই প্রতিবেদন আরও আট বছর বস্তাবন্দি হয়ে থাকবে।
আগের বছরের ১৪ অক্টোবর ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মওলানা ভাসানী ঢাকায় গ্রেফতার হন। ১৯৫০ সালে রাজশাহী কারাগারের খাপরাওয়ার্ডে বন্দিদের উপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পরপরই তিনি বিপিসি রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেন এবং গ্রান্ড ন্যাশনাল কনভেশনে গৃহীত প্রস্তাব অবিলম্বে মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)