আমানউল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট : বছর যায় বছর আসে। শুধু আসে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে একই কমিটি দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংগঠন। ২০০৩ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সম্মেলনে আশরাফুন্নেসা মোশাররফকে সভাপতি ও পিনু খানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অন্যদিকে ২০০১ সালে আত্মপ্রকাশের পর মাত্র একবার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে যুব মহিলা লীগের। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ। তখন নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

যুব মহিলা লীগ সূত্রে জানা গেছে, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় আন্দোলন-সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা রাখলেও দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় অনেকটাই স্থবির সংগঠনটির কার্যক্রম। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নবম সংসদে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই সংসদ সদস্য হওয়ায় তারা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন সংসদীয় কাজে। ফলে সংগঠনের নিজস্ব কর্মকাণ্ড না থাকায় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতেই অংশ নেন।

এদিকে নবম সংসদে মহিলা আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করা হয় ১৭ জনকে। তবে সারাদেশে মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে বলেও জানান সংগঠনের নেতারা।

যদিও গত বছর ২৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা মার্চ ফর ডেমোক্রেসি প্রতিহত করতে হাইকোর্ট এলাকায় ভূমিকা নিতে দেখা যায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলকে।

সংগঠন দুটির গঠনতন্ত্রে তিন বছর পর পর কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ হিসেবে সভাপতি আশরাফুন্নেসা মোশাররফ ও সাধারণ সম্পাদক পিনু খানের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ৮ বছর আগেই। আর যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৭ বছর আগে।

গত বছরের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের অন্য চার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শেষ হওয়ার পর যুব মহিলা লীগের সম্মেলনও দ্রুত শেষ করার তাগিদ ওঠে নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের জাতীয় সম্মেলনের আগেই সব সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন শেষ করার নির্দেশও দেয় দলের হাইকমান্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উভয় সংগঠনেরই সারাদেশে সব জেলা ও উপজেলায় কমিটি না থাকলেও যেগুলোতে আছে, সেগুলোর অধিকাংশ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও আগেই। এ প্রেক্ষাপটে তৃণমূল থেকেও জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকের বাইরে অর্ধডজন নেতা শীর্ষ দুই পদে আসতে আগ্রহী।

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, নবম সংসদের মহিলা সংরক্ষিত আসনের অনেকগুলোতেই এবার পরিবর্তন আসবে। অধিকাংশ স্থানেই নতুন মুখ আসতে যাচ্ছে।

মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুন্নেছা মোশাররফ দ্য রিপোর্টকে বলেন, অধিকাংশ জেলাতেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু কিছু জেলায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে বিভিন্ন জেলা সম্মেলন করা হচ্ছে না। সম্মেলনের বিষয়ে নেত্রী এখনও কোনো নির্দেশনা দেননি। আমি সম্মেলনের জন্য সব সময় প্রস্তুত। নেত্রী যখনই বলবেন তখনই সম্মেলন হবে।

সম্মেলনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা আক্তার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এখন এই বিষয়ে কথা বলার সময় নয়। আমাদের দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। উনি এই প্রক্রিয়া শেষ করলে আমরা আমাদের সম্মেলনের বিষয়ে কথা বলব। এ মুহূর্তে সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রীও সময় দিতে পারছেন না। উনি যখন বলবেন তখনই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই সারাদেশের জেলা-উপজেলার ৯০ শতাংশ সম্মেলন শেষ হয়েছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এইচএসএম/এনআই/সা/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)