ব্যর্থ নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া
সরকারবিরোধী আন্দোলনে পদে থেকেও যারা নিষ্ক্রিয় ও রাজপথে ব্যর্থ হয়েছেন এমন নেতাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের প্রতি আন্তরিকতাহীন, রাজপথে ব্যর্থ ও নিষ্ক্রিয়দের দল থেকে বিদায় করার লক্ষ্যে তিনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর আলোকেই সর্বাধিক আলোচিত-সমালোচিত ঢাকা মহানগর বিএনপির সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে মহানগর নেতাদের প্রতি নিজের ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করে তাদের প্রতি হুঁশিয়ারিও জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
গত সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মহানগর কমিটির সঙ্গে বসেন খালেদা জিয়া। মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক, ৪৯টি থানা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেন।
সেখানে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার অবর্তমানে সদস্য সচিব আবদুস সালাম পড়েন দলীয় প্রধানের তোপের মুখে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর নেতাদের ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে ও কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে মতবিনিময়কালে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় তিনি অনেককে ধমকও দেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। বিশাল এ জনসংখ্যার কারণে মহানগর কমিটিকে দুই ভাগে ভাগ করার বিষয়টি বিবেচনাধীন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।
ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ খোকন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ম্যাডাম অনেক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। সারাদেশে যেভাবে আন্দোলন হয়েছে ঢাকাতে তার ছিটাফোঁটাও লাগেনি।’
বিশেষ কমিটি গঠন সম্পর্কে খোকন বলেন, ‘কাকে কমিটিতে দায়িত্ব দেবেন এটা ম্যাডামই বলতে পারবেন। এর বাইরে কিছু বলা যাবে না।’
বৈঠক সূত্র জানায়, মতবিনিময়ের সময় উপস্থিত নেতারা বক্তব্য তুলে ধরলে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এখানে যারা আছেন, কে কি করেছেন, প্রত্যেকের খবর আমি জানি। কমিটিতে কিছু লোক আছে যারা দিনে বিএনপি ও রাতে আওয়ামী লীগ করে। তাদের বাদ দেওয়া হবে। সব আমার নলেজে আছে। এ সব চলবে না। যারা কাজ করেনি তারা বাদ পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বড় বড় কথা বললেও মহানগরে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে তা পকেট কমিটি হয়েছে। এই কমিটিতে অনেক ত্যাগী, পরীক্ষিত, সৎ নেতা স্থান পাননি। দলের দুর্দিনে যারা কাজ করেছে তারা নতুন কমিটিতে স্থান পাবে।’
খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘যারা ব্যর্থ হয়েছে তাদের বাদ দেওয়া হবে। যারা সফল হয়েছে এবং নতুন ত্যাগী ও যোগ্যদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।’
নেতারা কথা বলতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, তোমরা কখনই রাজপথে নামোনি। সেনানিবাসের বাড়ি থেকে আমাকে যখন জোর করে বের করে দেওয়া হল তখন তো তোমাদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। তখন তো পুলিশ গুলি করেনি। আমাকে গুলির কথা বলে লাভ নেই।
বিএনপি প্রধান বলেন, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে থাকলে হবে না। আপনারা ঘরে থাকলেও সরকার মামলা দেবে। বিএনপি ছেড়ে দিলেও মামলা দেবে। আপনারা রাজনীতি করতে এসেছেন, তাই রাজপথে থাকতে হবে।
সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে নতুন উদ্যমে সবাইকে নিয়ে কাজ শুরু করতে চাইলে খালেদা জিয়া তাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘কমিটি কীভাবে হবে তা তুমি বলার কে? কমিটি করার জন্যই আমি এখানে বসেছি।’
বৈঠক শেষে আবদুস সালাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নেত্রী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের কমিটির অবস্থান এবং অতীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা জানিয়েছি, ঢাকায় আন্দোলন জমাতে কমিটি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নির্যাতনে আন্দোলন যথাযথ ফলপ্রসূ হয়নি।’
সালাম বলেন, ‘নেত্রী যদি মনে করেন বর্তমান কমিটি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি, তাহলে তিনি যাকে দায়িত্ব দেবেন, তার নেতৃত্বেই আমাদের আন্দোলন চলবে। এটিকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
সালাম জানান, মহানগরের নতুন কমিটি না হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমান কমিটিই দায়িত্ব পালন করবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৪ মে খালেদা জিয়া সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক এবং আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। ছয় মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করার কথা থাকলেও প্রায় দুই বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ৪ ডিসেম্বর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক হন তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/ এমএইচ/ এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)