ওয়াসার উপ-সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ, পদোন্নতি, আন্তঃবদলি ও অন্যান্য উৎস থেকে তিনি এ ঘুষ গ্রহণ করেন।
ঢাকা সেনানিবাস সদর দফতরের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের এক অনুসন্ধানে এ সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। উপ-সচিব জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এ অভিযোগ ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে। সোমবার দুদকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন তা যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঢাকা সেনানিবাস সদর দফতরের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারির এক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম ওয়াসার উপ-সচিব জাহাঙ্গীর নিয়োগ, পদোন্নতি ও আন্তঃবদলির উৎস থেকে ঘুষ গ্রহণ করেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে তার নিজ উপজেলার অধিবাসীসহ চট্টগ্রাম জেলার লোকজনকে প্রাধান্য দেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ওয়াসা দেশের একটি জাতীয় সম্পদ হওয়ায় কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে বাংলাদেশের সব জেলার লোকজন প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার অধিকারী। বিগত দিনের নিয়োগ কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে তিনি কোটা পদ্ধতি অনুসরণ না করে চট্টগ্রাম ওয়াসার রাউজান উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী ফারহানা জেবিন, স্টোরকিপার সাইফুদ্দিন চৌধুরী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল হাসানকে নিয়োগ দিয়েছেন। এদের কাছ থেকে তিনি মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়েছেন।
২০১৩ সালের জুলাই মাসের নিয়োগ পরীক্ষায় তার শ্যালক মো. শোয়াইব খানকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ছাড়াই রাজস্ব তত্ত্বাবধায়ক পদে নিয়োগের চেষ্টা করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিগোচর হলে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শোয়াইব খান বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে দৈনিকভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ওয়াসার বিক্রয় শাখা এবং রাজস্ব শাখায় বদলীর ক্ষেত্রে তিনি ঘুষ নিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে ওয়াসার কয়েকজন অসাধু কর্মচারী তাকে সহায়তা করেন। বিক্রয় শাখার কর্মচারী (সহকারী পাম্প অপারেটর) মো. তারেক উদ্দিনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন তদবিরের ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করেন।
নিয়ম অনুসারে পাম্প অপারেটর এবং সহকারী পাম্প অপারেটর পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের ওয়াসার পাম্পে কাজ করতে হয়। কিন্তু মো. তারেক উদ্দিন একজন সহকারী পাম্প অপারেটর (এপিও) পদবীর হয়েও বিক্রয় শাকায় কর্মরত আছেন। উপ-সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বিক্রয় শাখায় বদলি করে এনেছেন। উপ-সচিবের পক্ষে তারেক উদ্দিন ঘুষ গ্রহণের কাজগুলো করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার রেভিনিউ শাখার মিটার পরিদর্শক মো. ফরিদুল আলম প্রথমে মড-১ এ কর্মরত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি উপ-সচিব জাহাঙ্গীরকে ঘুষ দিয়ে বিক্রয় শাখায় বদলি হন। বর্তমানে তিনি উপ-সচিবকে ঘুষ দিয়েই রেভিনিউ শাখায় কর্মরত।
চট্টগ্রাম ওয়াসার মোহরা অফিসে নিম্নমান সহকারী মো. হাসান প্রথমে অফিস পিয়ন পদে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে উপ-সচিব জাহাঙ্গীরকে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে নিম্নমান সহকারী পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীর চট্টগ্রাম ওয়াসার সহকারী সচিব পদে যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি উপ-সচিবের পদে পদোন্নতি পান। রাউজান উপজেলার কদলপুর গ্রাম তার স্থায়ী ঠিকানা।
(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এনডিএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)