আমানউল্লাহ আমান, দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বিএনপির সমালোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সরকার র‌্যাবকে ব্যবহার করছে না।’

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব তো বিএনপির সৃষ্টি। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে দমন-পীড়নের জন্য বিএনপি র‌্যাব সৃষ্টি করে। এখন র‌্যাব যা করছে তা আইন মেনেই করছে।’

গণভবনে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা দ্য রিপোর্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মানবতার কথা তুলে র‌্যাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত র‌্যাব সৃষ্টি করে যখন আওয়ামী লীগকে দমন-পীড়ন করেছে তখন তাদের এই মানবতাবোধ কোথায় ছিল?’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুইভাগে ভাগ করে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যের পর রুদ্ধধার বৈঠকে তিনি দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মহানগরের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটি গঠন দ্রুত শেষ করতে বলেছি। এরপর মহানগরকে দুইভাগে বিভক্ত করে কমিটি ঘোষণা করা হবে।’

বৈঠকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়। ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচন অতি শিগগিরই হবে। এ জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘মহানগর কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেওয়া হবে।’

বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেছেন, সাংগঠনিক সফরে বের হয়ে বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিদের প্রভাব খাটানোর চিত্র দেখা গেছে।

এ সময় সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করতে গিয়ে খুলনা বিভাগের দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক যশোরের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেন। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন প্রভাব খটানোর অভিযোগ তোলেন টাঙ্গাইলের আব্দুল বাতেন এমপির বিরুদ্ধে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না। নির্বাচনের পরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জেলা কমিটিকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়াই আছে। তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এ প্রসঙ্গে পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে হওয়া উচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ নজির রয়েছে। বাংলাদেশেও এ আইন করা যেতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’ এ সময় আইন করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আশরাফুল ইসলামকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকের শুরুতে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যার যার এলাকায় সফর করে সমস্যা সমাধান করবেন। আমাদের এ নির্বাচন হেলায়-ফেলায় দেখলে চলবে না।’

তবে দলের সভানেত্রী জানিয়েছেন, কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে যদি দল সমর্থিত প্রার্থী থাকে সেক্ষেত্রে উন্মুক্ত রাখাই ভালো। বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবার আগে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। এখনও আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করে এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।’

বৈঠকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন ও বিএম মোজাম্মেল হক বক্তব্য দেন।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামী ২৬ মার্চ তিন লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতীয় সঙ্গীতের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক সঙ্গে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটিয়ে গিনেস বুকে নাম লেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। এর আগে এক লাখের অধিক লোকের সমাগম ঘটিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে পাশের দেশ ভারত এ রেকর্ড গড়ে। এবার বাংলাদেশ এ রেকর্ড গড়তে চায়। এ জন্যে দলের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ও সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে আগামী ৭ মার্চ ঢাকায় বিশাল জনসভার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক সমাগমের ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিমাসে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এইউএ/এনডিএস/এসকে/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)