তুমি তো জানো আজ বসন্তের দিন…
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন আজ। ফাগুন রাঙা মনে আগুন লাগানোর দিন। ফুল ফুটানোর পুলকিত সময় আজ। উদাস হাওয়া, গাছের কচি পাতার নাচ আর কোকিলের গান শোনার দিন আজ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়- আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে/এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়/সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল/কার অনাদরে আজি ঝরে যায়। কেন কাছে আসো, কেন মিছে হাসো/কাছে যে আসিত সে তো আসিতে না চায়/সুখে আছে যারা, সুখে থাক তারা…।
কিংবা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায়- ‘ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত’।
বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে প্রকৃতিতে। মাঘের শেষদিক থেকেই গাছে গাছে ফুটতে শুরু করেছে আমের মুকুল। শীতের খোলসে মুখ লুকানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম ফুটে উঠেছে প্রকৃতিতে।
ইট-পাথরের নগরীতে বসন্ত তার আগমনী গানের প্রতিধ্বনি শুনিয়েছে। ফাগুন হাওয়ার দোল লেগেছে মানুষের মনে। প্রীতির বন্ধনে আপন মহিমায় তরুণ-তরুণীরা আজ খুঁজে নেবে বসন্তকে। আপন মানুষকে অনুভূতি ব্যক্ত করে বলবে- তুমি তো জানো আজ বসন্তের দিন/এসো শোধ করি ভালোবাসার ঋণ।
তরুণ-তরুণীরা বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, শাহবাগ, চারুকলা , পাবলিক লাইব্রেরি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুখরিত রাখবে সারাদিনমান। বাসন্তী রঙের পোশাকে রাঙাবেন নিজেদের। বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় গাঁদা, কৃষ্ণচূড়া গুঁজে আর তরুণরা বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে পথে পথে ঘুরবেন।
নগরীর বিভিন্ন উদ্যান, ফাস্টফুড, ক্যাফেও মুখর থাকবে আজ। মুঠোফোন, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলবে তাদের বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, বনানী লেক, ধানমন্ডি লেক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মিন্টো রোড, বলধা গার্ডেন, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণে দিনভর চলছে বসন্তের নানা আয়োজন।
এদিকে, জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ আজ নানা আয়োজনে বরণ করে নেবে বসন্তকে। আয়োজকরা জানান, একযোগে অনুষ্ঠান চলবে চারুকলার বকুলতলা, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর ও বাহাদুরশাহ পার্কে।
চারুকলার বকুলতলায় সকাল ৭টায় বসন্তের অনুষ্ঠান শুরু হয় এসরাজ বাদনে।
সকাল সাড়ে নয়টায় চারুকলা থেকে বের করা হয় একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি টিএসসি এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার চারুকলায় এসে শেষ হয়।
বিকেল সাড়ে চারটায় চারুকলার বকুলতলায় শুরু হবে বসন্ত বরণে দ্বিতীয় পর্ব। বিকেলে বকুলতলায় থাকবে দলীয় সংগীত, একক সংগীত, আবৃত্তি ছাড়াও নানা আয়োজন। এছাড়া টিএসসি, শাহবাগ, বইমেলা প্রাঙ্গণসহ সব জায়গায় থাকবে বসন্তের ছোঁয়া। দিনভর চলবে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি আর আড্ডা।
এছাড়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের উদ্যোগে বসন্তকে বরণ করে নিতে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। দিনভর গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, একক সংগীত, দলীয় সংগীত পরিবেশনসহ নানা আয়োজন থাকছে এসব অনুষ্ঠানে।
এদিকে, বরাবরের মতো সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায়লোকজ নানা আয়োজন নিয়ে সকাল ১১টায় শুরু করেছে বসন্ত বরণ।
বকুলতলায় মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে বিকেল ৩টায়। এ ছাড়া ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে বিকাল ৪টা এবং বাহাদুরশাহ পার্কে সাড়ে ৪টা থেকে রয়েছে বসন্ত উৎসবের আয়োজন।
(দ্য রিপোর্ট/একে-সাআ-জেএইচ/এমডি/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)