ইসহাক ফারুকী, দ্য রিপোর্ট : চলচ্চিত্রের স্থির চিত্রগ্রাহক আসিফ জহির অংকুর। ১৯৮৮ সাল থেকে চলচ্চিত্রের ছবি তোলা শুরু করেছেন, এখনও কাজ করে যাচ্ছেন পুরোদমে। দ্য রিপোর্টের সঙ্গে আলাপচারিতায় অংকুর জানালেন এ পেশার ভালোলাগা-মন্দলাগা, ভবিষ্যৎ ও চলচ্চিত্র শিল্পের নানা কথা।

দ্য রিপোর্ট : ক্যামেরার সঙ্গে মিতালি যেভাবে…

অংকুর : আমার বাবা জহিরুল হকও ছিলেন চলচ্চিত্রের স্থির চিত্রগ্রাহক। বাবার ছবি তোলা দেখে আমার আগ্রহ তৈরি হয়। বাবার কাছেই ক্যামেরার হাতেখড়ি। ১৯৮৬ সালে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার সময় ক্যামেরার প্রতি ঝোঁক আরও বেশি দেখা দেয়। তারপরই কাজে নেমে পড়ি। যতটুকু কাজ শিখেছি তা বাবার কাছ থেকেই। আমাদের দেশে ফটোগ্রাফির ওপর উল্লেখযোগ্য তেমন প্রতিষ্ঠান নেই, তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেওয়া হয়নি। যা শিখেছি নিজের ইচ্ছায়, ইন্টারনেট থেকে পড়াশোনার মাধ্যমে।

দ্য রিপোর্ট : যেভাবে এ পেশার প্রেমে পড়লেন…

অংকুর : আমি সবসময় সততাকে মূল্যায়ন করতে চাই। এ পেশায় মিথ্যা কথা নেই, ছলচাতুরি নেই। ব্যবসায় কমবেশি মিথ্যা বলতে হয়, কন্ট্রাকটারিতে নয়-ছয় করতে হয়। আমি ছবি তুলি আর এটাই আমার সৎ উপার্জন। তাছাড়া এ কাজ করতে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার একটি স্বভাব হলো- এক জায়গায় স্থির হয়ে কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না। চলচ্চিত্রের কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকেশনে ছুটে যেতে হয় এতে মনের খোরাক মেটে।

দ্য রিপোর্ট : প্রথম ছবি তোলার স্মৃতি…

অংকুর : আগেই তো বললাম বাবাও চলচ্চিত্রের স্থির ফটোগ্রাফার ছিলেন। বাবা যখন ছবি তুলতেন আমিও মাঝে মাঝে ছবি তুলতাম। কখনও বাবা নিজেই ক্যামেরা এগিয়ে দিয়ে ছবি তোলার আদেশ দিতেন। এ থেকেই একটু একটু সাহস জুগিয়েছি। আমার প্রথম একক কাজ দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘মুজাহিদ’ সিনেমায়। প্রথমে রোজিনা ম্যাডামের ‘ক্লোজ শট’ তুলেছি। সেটা ১৯৮৮ সালের শেষের দিকের কথা।

দ্য রিপোর্ট : এ পর্যন্ত কতগুলো চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন?

অংকুর : আমি বছরে বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করি না। তাছাড়া কারও কাছে কাজের জন্য ধরনা দিই না। আমার পরিচিত বেশকিছু পরিচালক-প্রযোজক আছেন তাদের সঙ্গেই কাজ করি। এ ছাড়া ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আমি কোনো কাজ করিনি। চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা শুরু হওয়ায় ভেবেছিলাম কাজ ছেড়ে দেব। এখন তো চলচ্চিত্রের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। এ পর্যন্ত ৬০-৭০টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কামরুজ্জামানের ‘প্রেম প্রতিজ্ঞা’, ‘রঙিন মালেকা বানু’, ‘মালামাল’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘সাজানো বাগান’, এম এ মালেকের ‘তিন টেক্কা’, সুভাষ দত্তের ‘সহধর্মিনী’, আবিদ হাসান বাদলের ‘সুপারস্টার’, ইবনে মিজানের ‘আলাল দুলাল’, আওকাত হোসেনের ‘বন্ধু আমার’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘মিয়া ভাই’, অশোক ঘোষের ‘বাঘা আকবর’, ‘কালু গুণ্ডা’, এটিএম শামসুজ্জামানের ‘এবাদত’, চন্দন চৌধুরীর ‘ভালবেসে বউ আনবো’, ‘কি জাদু করিলা’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘কিছু আশা কিছু ভালবাসা’। এখন কাজ করছি জাকির খানের ‘রাঙা মন’, ‘চার অক্ষরে ভালবাসা’, মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘ইটিশ পিটিশ প্রেম’ ছবিতে।

দ্য রিপোর্ট : চলচ্চিত্রে কাজ করতে গিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতির কথা…

অংকুর : কামরুজ্জামান সাহেবের একটি চলচ্চিত্রে ২০-২৫ দিন আউটডোরে শুটিং চলাকালে কাজ করেছিলাম। সবার সঙ্গে থাকতে থাকতে এতটা মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম যে, ফেরত আসার সময় ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মানসিক অবস্থা দেখে চম্পা ম্যাডাম ফ্লাইট বাদ দিয়ে আমার সঙ্গে বাসে এসেছিলেন। আমি আসার পথে যেন মন খারাপ না করি এ জন্য তিনি এটা করেছিলেন।

দ্য রিপোর্ট : আগে চলচ্চিত্রের অশ্লীলতার কথা বলেছেন, এখনকার পরিস্থিতি কেমন দেখেছেন?

অংকুর : এখন তো ভালো ভালো সিনেমা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সিনেমা হল কোথায়। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর প্রসার ঘটায় মানুষের বিনোদন এখন ঘরের কোণে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সিনেমা হলগুলোর পরিবেশও ঠিক নেই। ঢাকায় ফ্যামিলি নিয়ে সিনেমা দেখার মতো কয়টা আছে? চার-পাঁচটা? এছাড়া সিনেমা হলগুলোয় দর্শকদের নিরাপত্তাও তেমন জোরালো নয় অনেক সময় ছিনতাই, রংবাজির ঘটনা ঘটে।

দ্য রিপোর্ট : দর্শকদের হলমুখো করতে হলে আপনার কোনো প্রত্যাশা যদি থাকে?

অংকুর : যে সিনেমা হলগুলো আছে সেগুলোর পরিবেশ আগে ঠিক করতে হবে। চলচ্চিত্র দেখতে টাকা কিন্তু বড় ফ্যাক্টর নয়, ফ্যাক্টর হলের পরিবেশ। এ ছাড়া প্রজেকশন সিস্টেম উন্নত করতে হবে।

দ্য রিপোর্ট : ফটোগ্রাফির ভবিষ্যৎ ও নতুনদের সম্পর্কে কিছু বলুন...

অংকুর : এখন তো ফটোগ্রাফি অনেক সহজ হয়ে গেছে। ক্যামেরা সিস্টেমের ডিজিটালাইজেশন এ কাজকে অনেক গতিশীল ও সহজ করে দিয়েছে। আগে তো ছবি তোলার পর কালার কারেকশন করা হতো। কেমিক্যাল দিয়ে কোনো ছবি আন্ডার ডেভেলপ করা হতো, কোনোটা ওভার ডেভেলপ। এখন তো এ সমস্যা নেই। আর নতুনদের উদ্দেশে আমার যে কথা তা হলো, এ পেশায় সচেতন থাকতে হবে, জানাশোনার পরিধি বাড়াতে হবে। আর এ সংক্রান্ত পড়াশোনা ঠিকঠাক চালাতে হবে। কোনো ছবি তুলতে গেলে নিজের স্যাটিসফেকশন আগে জরুরি, যেমন আমি নিজে স্যাটিসফাইড না হয়ে কোনো ছবি তুলি না।

(দ্য রিপোর্ট/আইএফ/একে/শাহ/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)