হরতালে মাঠে নেই ছাত্রদল
তারেক, মাহমুদুল ও সাগর, দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : সরকার পতনের আন্দোলনে মাঠে নেই বিএনপির প্রধান সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল। সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা, ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে পদ বাণিজ্য, অছাত্র ও ভুয়া ছাত্র দিয়ে নেতৃত্বদান ও দলীয় কোন্দলের কারণে দলের লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে অতীতে আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত এ সংগঠনটি। যা নিয়ে সংগঠনের প্রধান অভিভাবক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সারাদেশের নেতাকর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই ছাত্রদলের সামান্যতম আন্দোলনের ছোঁয়া। বিগত দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা থাকলেও বর্তমান কমিটি ১৩ মাসে একদিনের জন্যও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের এমন নিষ্ক্রিয়তার কারণ হিসেবে এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির গূরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা বিশ্বদ্যালয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণ কমিটিতে তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমর্থিত। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও বিএনপি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন পিন্টু সমর্থিত। অন্যদিকে মহানগর উত্তর কমিটি যুবদল সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমর্থিত। যে কারণে শুধুমাত্র মিছিল-সমাবেশ ছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো সহযোগিতাই পাচ্ছে না গূরুত্বপূর্ণ এ শাখাগুলো। এছাড়া সারাদেশের জেলা ও মহানগর কমিটি এখনো পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি বর্তমান কমিটি।
তিনি আরো জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটির বাইরে থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাবেক নেতাকর্মী বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবেব সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখলেও গূরুত্বপূর্ণ এ শাখাগুলোকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে তারা হরতালসহ কঠোর কর্মসূচিতে অংশ নেন না। ফলে ধীরে ধীরে কর্মী ও নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে এ সংগঠনটি।
সূত্র মতে, মূলত এ দ্বন্দ্বের কারণেই দীর্ষ নয় বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কোনো কমিটি হচ্ছে না।
এদিকে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১৮ দলের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল চলছে। সোমবার ভোর ৬টা থেকে হরতালে শুরু হয়েছে চলবে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে হরতালে ছাত্রদলের ঝটিকা মিছিল, কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো ছাড়া আর কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রসমাজের রয়েছে রক্তস্নাত অবদান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সর্বশেষ ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের বিপ্লব দেখেছে সারাবিশ্ব। প্রতিটি আন্দোলন সফল করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে ছাত্ররাই ছিল চালকের ভূমিকায়। যে কারণে দলের নীতিনির্ধারকরা আশা করেছিলেন বিএনপির চলমান আন্দোলনে ছাত্রদল সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে। কার্যত ছাত্রদল মাঠেই নামতে পারছে না।
জানা গেছে, আন্দোলনকে গতিশীল করতেই গত বছর ৪ সেপ্টেম্বরে আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে ছাত্রদলের সভাপতি ও হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন তারা। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ কমিটির অনুমোদন দেন। এর পর দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও রাজপথ আন্দোলনে জ্বলে উঠতে পারেনি ছাত্রদল। এমনকি আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশও করতে পারেনি। এ নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক ছাত্রনেতারা ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির নেতৃত্ব নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি।
ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল বলেন, ‘ছাত্রদলে কোনো দ্বন্দ্ব কোন্দল নেই। স্বৈারাচারী সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের হামলা, মামলা দিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে নির্বিচারে। তারপরও আমরা রাজপথে আছি।’
বর্তমান সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে ছাত্রদলের ওপর কোনো আঘাত এলে সেই আঘাত প্রতিহত করে পাল্টা আঘাত করা হবে।’
আন্দোলনে রাজপথে থাকার ঘোষণা থাকলেও প্রথমদিনের হরতালে বিছিন্ন মিছিল ছাড়া বড় ধরনের কোনো শোডাউন চোখে পড়েনি।
(দিরিপোর্ট২৪/এমএইচ/এমসি/জেএম/নভেম্বর ০৫, ২০১৩)