জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল
দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : স্কটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল ১৮৭৯ সালের ৫ নভেম্বর মারা যান। তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গ তত্ত্বের ওপর গবেষণার জন্য তিনি স্মরণীয়। অনেক ক্ষেত্রেই নিউটন ও আইনস্টাইনের সঙ্গে তার নাম উচ্চারিত হয়। আইনস্টাইনের মতে নিউটনের পর ম্যাক্সওয়েল সবচেয়ে প্রভাবশালী পদার্থবিজ্ঞানী। গণিত এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানেও ছিল তার সমান দক্ষতা। আধুনিককালের বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সে তার তত্ত্বের অবদান রয়েছে।
ম্যাক্সওয়েল ১৮৩১ সালের ১৩ নভেম্বর এডিনবরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী। বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তার অনুরাগ। তাই চেয়েছিলেন, ছেলেকে তিনি বিজ্ঞান পড়াবেন।
কলেজে পড়াকালে তিনি ম্যাক্সওয়েলকে গবেষণাগার তৈরি করে দেন। মাত্র ষোল বছর বয়সে তিনি কয়েকটি যন্ত্র নির্মাণ করেছিলেন। তার বাবা সেগুলো দেখান তৎকালীন নামকরা বিজ্ঞানী ‘ফোরবিজ’কে। ফোরবিজ আবিষ্কারগুলো পাঠান লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটিতে।
সতেরো বছর বয়সে ম্যাক্সওয়েল এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পাস করার পর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে কিছুদিন চুম্বক ও তড়িৎ সম্পর্কে গবেষণা করেন। এরপর উন্নততর গবেষণার জন্য তিনি যোগ দেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ১৮৫১ সালে আবিষ্কার করেন প্রসিদ্ধ ‘কর্ক স্কু সূত্র’। কথিত আছে, কেমব্রিজে অবস্থানকালে ম্যাক্সওয়েল তৎকালীন ইংল্যান্ডের সেরা বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন এবং তারই অনুপ্রেরণায় তড়িৎ চুম্বক সম্পর্কে গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৮৬০ সালে কিংস কলেজের আমন্ত্রণে গ্রহণ করেন সেখানকার পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যার প্রধান অধ্যাপকের পদ।
কিংস কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৮৬৪ সালে ম্যাক্সওয়েল আবিষ্কার করেন আলোকের তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গতত্ত্ব।
ম্যাক্সওয়েলের ‘কর্ক স্কু’ সূত্রের সাহায্যে তড়িৎপ্রবাহের ফলে চুম্বক শলাকার দিক নির্ণয় করা হয়ে থাকে। ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎচুম্বক তরঙ্গতত্ত্বকে যুগান্তকারী আখ্যা দেয়া হয়। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে অথবা চুম্বক ক্ষেত্রে সামান্যতম বিশৃংখলা ঘটলেই আলোর গতির সমান একটি তড়িৎ চুম্বকতরঙ্গ বেরিয়ে আসে। ওই তরঙ্গের ধর্মও সাধারণ আলোর ধর্মের মতোই অর্থাৎ আলোকের মতো এদের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, পোলারইজেশন ইত্যাদি ঘটে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আধুনিক বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে তিনটি বিশেষ নিয়মের ওপর। প্রথম নিয়মটি নিউটনের গতিবিজ্ঞান, দ্বিতীয়টি ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গতত্ত্ব এবং তৃতীয়টি তাপ-গতিবিদ্যার সূত্রাবলী।
কিছু মূল্যবান বই রচনা করেন ম্যাক্সওয়েল। এগুলোর মধ্যে ‘থিওরি অব হিট’ (১৮৭১) এবং ‘ম্যাটার এন্ড মোশন’ (১৮৭৭)বিজ্ঞানীদের কাছে বেশ পরিচিত। অন্যান্য বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ট্রিটিজ অন ইলেকট্রিসিটি এন্ড ম্যাগনেটিজম’ (১৮৭৩) ও ‘এ ডিনামিক্যাল থিওরি অব দি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড’ (১৮৬৫)।
দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৮৭৯ সালের ৫ নভেম্বর তিনি মারা যান।
(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/ডব্লিউএস/জেএম/নভেম্বর ০৫, ২০১৩)