দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : ভারতীয় সীমানায় অবস্থিত কুড়িগ্রামের ১৮টি ছিটমহলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জীবন সংগ্রামে বেছে নিয়েছেন বিচিত্র পেশা। বাঁচার তাগিদে এদের অনেকেই চোরাকারবারি। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসব মানুষের দিন কাটে অর্ধাহারে-অনাহারে।অর্থসংকটে অনেক বাবা মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন না। স্বাধীনতার পর ৪২ বছর পার হলেও স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছেন না ছিটমহলবাসী। তাদের জীবন চলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের (বিএসএফ) কথামতো।

কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের ২৬৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৯২৯নং থেকে ১০৪৭নং পর্যন্ত ২২৮.২৮ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১০৮.২৮ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। ২২৯নং থেকে ১০০০নং পিলার পর্যন্ত ১৫টি স্থানে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এর ফলে এ এলাকায় বিএসএফের নজরদারি বেশি। এসব এলাকায় ভারতের ৪৯ বিওপি এবং ১৪৭ পোস্ট বিএসএফ রয়েছে।

এই এলাকার অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহুকুমার ভেতরে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের ১৮টি ছিটমহলের অবস্থান। প্রায় ২৬৬৬ দশমিক ৯৪ একর আয়তনের ছিট শিবপ্রসাদ মোস্তাফী, ছিট করলা, উত্তর বাঁশজানি, উত্তর মশালডাঙ্গা, কচুয়া, দক্ষিণ মশালডাঙ্গা, পশ্চিম ছিট মশালডাঙ্গা, মধ্য ছিট মশালডাঙ্গা, পূর্ব ছিট মশালডাঙ্গা, ছোট তিলাই, পিয়াতুর কুটি, পশ্চিম বাতাতুল ছাড়াও উত্তর ধলডাঙ্গা ছিটমহলে প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন।

তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের কোনো যোগাযোগ নেই। ছিটমহলবাসী বাধ্য হয়ে ভারতের আশপাশের এলাকায় কাজকর্মসহ হাটবাজার করে থাকেন। বিএসএফের নজরদারি বাড়লে তারা ছিটমহলের বাইরে যেতে পারেন না। ফলে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ছিট মশালডাঙ্গার বাসিন্দা তজিবর, মফিজুল, রাহেনা, রেখা বেগমসহ শত শত নারী-পুরুষের কণ্ঠে একই কথা- বাঁচতে হবে।

হাতে টাকা নেই, সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা নেই। ভারতীয়দের কথামতো চলতে হয়। এত কষ্টে আর জীবন চলে না। প্রতিদিন খাবার জোটে একবেলা-দেড়বেলা। পেট ভরে খাওয়া তাদের কাছে স্বপ্নের মতো।

সরকারি সিদ্ধান্তের অভাবে ছিটমহলবাসীর কষ্টের শেষ নেই। ছিটমহলের বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই তাদের। নির্দিষ্ট আয়-রোজগার না থাকায় ছিটমহলবাসীর জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। চোখ-মুখে তাদের রাজ্যের ক্ষুধা। নানা অনিয়মে ভেঙে পড়ছে তাদের শরীর। বাসা বাঁধছে জটিল সব অসুখ।

সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে সেখানকার নারী ও শিশুরা। পর্যাপ্ত খাবার না পেয়ে মারাত্মক অপুষ্টিতে বেড়ে উঠছে সেখানকার শিশুরা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অশিক্ষা ১৮টি ছিটমহলবাসীর জীবন অনিশ্চিত করে তুলেছে।

চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে ছিটমহলবাসী আলেফ উদ্দিন ও রফিকুল জানান, হাতুড়ে ডাক্তার, কবিরাজ ও ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতে হয়। এখানকার মানুষ ঠিকমতো পেট ভরে খাবার খেতে পান না। তাই তারা পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে চান ভোটের অধিকার তারা।

নিজ দেশে পরবাসী হওয়ায় ভারত সরকারও তাদের জীবনমান উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখছে না। ফলে তারা চোরাচালানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে জীবন-জীবিকার তাগিদে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক বলেন, ছিটমহলবাসীর পুনর্বাসনে সরকারের নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। যার কারণে আমাদের কিছু করার নেই।

(দিরিপোর্ট২৪/ওএস/এএস/জেএম/অক্টোবর ০৮, ২০১৩)