সাক্ষাৎকারে ববি হাজ্জাজ
মিডিয়া আনবায়াসড হলে এরশাদ সহানুভূতি পেতেন
ববি হাজ্জাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টা। একই সঙ্গে তিনি এরশাদের মুখপাত্র ও জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী। ১২ ডিসেম্বর এরশাদকে তার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক থেকে র্যাব হাসপাতালে নেওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন ববি। সে সময় র্যাব ববিকে নিয়ে যায় তাদের উত্তরার সদর দফতরে। পরে সেখান থেকে ফিরেই ১৬ ডিসেম্বর দেশত্যাগ করেছিলেন।
সম্প্রতি বনানীর নিজ কার্যালয়ে দ্য রিপোর্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এরশাদের বর্তমান অবস্থান, জাপার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, কাউন্সিল ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন জাপার আলোচিত নেতা ববি হাজ্জাজ। সাক্ষাতকার নিয়েছেন দ্য রিপোর্টের প্রতিবেদক সাগর আনোয়ার
এরশাদ সাহেবের বর্তমান অবস্থান কি ?
২৩ বছর ধরে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন সবাই এরশাদকে নির্যাতন করেছেন। ভুল অনেকেই করেন। নির্যাতিত হন শুধু এরশাদ। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি গণমাধ্যমে স্যারকে নিয়ে তামাশা করা হয়। মিডিয়া আনবায়াসড হলে সবচেয়ে সহানুভূতি পেতেন এরশাদ।
অনেকেইতো বলছেন উনি নাটক করেছেন। আপনি কি বলেন?
গত কয়েক মাসে মিডিয়া বলছে উনি না কি নাটক করেছেন। যে দুর্বল সে কি সবাইকে নাচাতে পারে? যারা শক্তিশালী তারাই তো দুর্বলকে নাচায়। আমরা দুর্বল বলেই সবাই তামাশা করছে। আমাদের নিয়ে খেলা হচ্ছে।
এরশাদ সাহেবইতোঘনঘন অবস্থান পরিবর্তন করেন?
আমরা দুর্বল বলেই তো আমাদের কথা বদলাতে হয়। সব খেলা হচ্ছে আমাদের নিয়ে। আর মিডিয়া আমাদের নিয়ে তামাশা করছে। আমরা তো বাইরে গিয়ে কথা বলতে পারছি না। এ জন্য আমাদের কথা বদলাতে হচ্ছে, যদি আমরা শক্তিশালীই হতাম তাহলে তো আমাদের কথা পাল্টাতে হতো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে শুরু করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সবাই ভুল করেছেন, কই তাদের নিয়ে তো মিডিয়া কথা বলে না, তাহলে শুধু কেন এরশাদকে নিয়ে এতো কথা। সবাই কেন দুর্বলকে নিয়ে কথা বলে।
মঞ্জু হত্যা মামলাকে এরশাদ কীভাবে দেখছেন।
আমাদের কোর্টে আজকাল আলোচনা হয়, কে ঘুষ খায় না। ২০০০ সালে আমি একবার হাইকোর্টে গিয়েছিলাম। তখন হাইকোর্টে আলোচনা হচ্ছিল, এরা একটু ঘুষ খায়। আর এখন আলোচনা হয়, কে খায় না। মঞ্জু হত্যা মামলা কোর্টের দুর্বলতা। কোর্ট তো নৈতিকভাবে দুর্বল হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে। এর জন্য দায়ী আমরা। রাজনৈতিক দল দায়ী।
এরশাদের ঘোষণা অনুযায়ী পার্টি কীভাবে পুনর্গঠন করছেন।
পঞ্চাশ-ষাটের দশকে আওয়ামী লীগ যেমন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ছিল, এবার আমরা সে রকম শক্তিশালী পার্টি করার উদ্যোগ নিব। তৃণমূল থেকে পার্টি সু-সংগঠিত করা হবে। আর্মির মতো চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনা হবে। সত্তুর-আশির দশকে স্ট্রাকচার না থাকায় বার বার ক্যু হয়েছে, আমাদের পার্টিও শক্তিশালী ছিল না বলে এবার নানা ঘটনা ঘটেছে। এবার তাই পার্টির চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনতে চাই। জামায়াত তো আর এখন পার্টি হিসেবে নেই। তবে ওরা যখন যাদের সঙ্গে থাকে মর্যাদা পায়। কিন্তু আমরা কারও কাছ থেকেই মর্যাদা পাইনি। তাই স্যার এবার পার্টিকে গোছাতে চাচ্ছেন।
এরশাদের নির্দেশ অমান্যকারীরা দল থেকে কি বাদ পড়ছেন?
এটা তো আর বলা যাবে না। তাহলে তো কাউন্সিলের দরকার ছিল না। তবে স্যার এবার প্রকৃত কর্মীদেরই মূল্যায়ণ করবেন।
এবার যারা এমপি হলেন তাদের ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান কী হবে?
নির্বাচন যখনই হোক, এরপর থেকে আমরা আর হুট করে কাউকে মনোনয়ন দেব না।
এরশাদের নির্দেশ অমান্য করে নেতারা এমপি পদে প্রার্থী হলেন কেন?
সরকার যদি বলে তোমাদের এমপি করা হবে, তাহলে তো নির্বাচনে কিছু লোক যাবেই। এবার যারা এমপি হয়েছেন, তাদের কি এমপি হওয়ার কথা ছিল? রাজনীতি করার উদ্দেশ্য কি, এমপি-মন্ত্রী হওয়া? আর যেখানে সরকার তাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছে তোমাকে এমপি করা হবে। তাহলে উনারা নির্বাচনে যাবেন না কেন। তৃণমূলের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকা নেতারা এবার এমপি হলেন। কর্মীরা যদি শক্তিশালী হতো তাহলে নেতারা এমপি পদে দাঁড়াতে পারতেন না।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে আপনাদের এখনকার মূল্যায়ণ কী।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ স্বচ্ছ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তে শুধু রাষ্ট্রপতিকে এ দায়িত্ব দিতে হবে। অর্থের যোগানটা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আসলে আমার মনে হয় অনেক সমস্যার সমাধান হতো। আর এটা আমরা রাতারাতি করতে পারি। শুধু সদিচ্ছার প্রয়োজন। বর্তমানে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিমকোর্টকে যদি নিরপেক্ষ করা যায় তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
রওশন এরশাদ কি এরশাদের সম্মতি নিয়ে বিরোধী দলের নেতা হয়েছেন?
পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হওয়া উচিত নয়। আমাদের দলের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা হয়েছে সেটা নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে পার্টির প্রধান সংসদ নেতা না হলে ভালো হয়।
তরুণ প্রজন্মের দুই নেতা সজীব ওয়াজেদ জয় ও তারেক রহমানকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আমি অবাক হব তারেক সাহেবকে তার দলের কর্মীরা ভোট না দিলে, কারণ উনি অনেকটা দলকে গুছিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু জয়কে নিয়ে আমরা কি নিশ্চিত? তাকে কি সবাই ভোট দিবে। আমরাও ধারণা করছি তাকে ভোট দিবে না। জোর আর ভয় ছাড়া এদেরকে কারা ভোট দিবে? তবে শীর্ষ নেতার কাছের লোকগুলো চামচা। চামচামিকে তারা একটি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পর্যন্ত চামচারা বাকশালের দিকে নিয়ে গেছে।
আপনি সরাসরি রাজনীতিতে নামছেন?
আমি এই মুহূর্তে নিজেকে ভোট চাওয়ার রাজনীতিতে জড়াতে চাচ্ছি না। তবে পার্টির চেয়ারম্যান যদি দায়িত্ব দেন তাহলে ভেবে দেখব।
১৬ ডিসেম্বর কি আপনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল, সে দিন আসলে কি হয়েছিল?
সে দিন আসলে কি হয়েছিল, দেখুন অনেক কিছু বলা যায় না। রাজনীতির বাইরেও অনেক কিছু আছে। হাইকোর্টের রায় নিয়ে সমালোচনা করলে যেমন আদালত অবমাননা হয় তেমনি কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়েও মন্তব্য করতে হয় না। আপনারা তো সবই বুঝেন। তবে এ ঝামেলা সহসা মিটবে বলে মনে হয় না।
সরকার কি ৫ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে?
না এটা নিয়ে আমরা এখন কিছু বলব না। সরকারকে আমরা সময় দেওয়ার কেউ না। জনগণ যদি না চায় তারা থাকতে পারবে না। আমি এরশাদ সাহেবের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নয় ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সরকার ৫ বছর থাকতে পারবে না। তাদেরকে একটা নির্বাচন দিতেই হবে।
বর্তমান সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ণ করছেন।
সরকারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণ করাটা হবে একাডেমিক। তবে এই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা কয়েক মাসব্যাপী কর্মসূচি নিব।’
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)