দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিদায় নিয়েছে প্রকৃতির রুক্ষ ঋতু শীতকাল। ধরায় ডানা মেলেছে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুল ফোটা শুরু হয়েছে গাছে গাছে। কৃষ্ণচূড়া আর শিমুলগাছগুলো সাজতে শুরু করেছে রক্তিম লালে। জীর্ণ পাতার মর্মর শব্দ ছাপিয়ে গাছে গাছে নতুন পাতার জন্ম হতে শুরু করেছে। ডালে ডালে ফুটেছে নানা রঙের, জাতের অসংখ্য ফুল। পঞ্জিকার হিসাবে সময়ের আপন নিয়মে বছর ঘুরে আবার এসেছ বসন্ত।

ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার। ফাগুনের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিতে আয়োজনের কোনো কমতি ছিল না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে। বরাবরের মতো উৎসবের প্রাণকেন্দ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে রবীন্দ্র সরোবরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয় বসন্তবরণ উৎসব।

বাংলাদেশের বড় উৎসবগুলোর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাবিতেই আয়োজন করা হয়েছে বসন্তবরণের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানের। বসন্তে প্রথম প্রহর থেকেই দেশের সেরা বিদ্যাপীঠে তরুণ-তরুণীদের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে। বইতে শুরু করে ফাগুনের হাওয়া। উৎসবপ্রিয় মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বাসন্তি রঙের শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে তরুণ-তরুণীরা দিনভর মাতিয়ে রাখে ক্যাম্পাস। বাসন্তি রঙের শাড়ি, খোঁপায় বাসন্তি ফুল আর উৎসবের পাঞ্জাবি-ফতুয়া মনে করিয়ে দেয় ধরায় বসন্ত এসেছে।

বসন্তের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ প্রাঙ্গণে। সকাল ৮টায় সেখানে শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে বাণিজ্য স্টাডিজ অনুষদ বসন্তবরণ উৎসব ও বসন্ত মেলা।

প্রধান অতিথি হিসেবে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইনসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ।

এদিকে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্ত মেলা। এতে মেহেদী উৎসব, নাগরদোলা, বায়োস্কোপ, বাদর খেলা, রম্য যাত্রা, পুঁথি পাঠ, বেলুন শুটিংসহ বহু আকর্ষণীয় খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

এছাড়া সকালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শুরু হয় বসন্তবরণের মূল অনুষ্ঠান। এস নটরাজের যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্তবরণ উৎসব।

সকাল সাড়ে নয়টায় চারুকলা থেকে বের করা হয় একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি টিএসসি এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার চারুকলায় এসে শেষ হয়।

বিকেল সাড়ে চারটায় চারুকলার বকুলতলায় শুরু হয় বসন্তবরণের দ্বিতীয় পর্ব। বিকেলে বকুলতলায় দলীয় সংগীত, একক সংগীত, আবৃত্তির আয়োজন করা হয়। টিএসসি, শাহবাগ, বইমেলা প্রাঙ্গণসহ সব জায়গায় ছিল বসন্তের ছোঁয়া। দিনভর চলেছে প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি আর আড্ডা।

এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে দিনভর গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, একক সংগীত, দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফানুস উড়িয়ে রাতে আয়োজনের সমাপ্তি হয়।

(দ্য রিপোর্ট/সাআ-জেএইচ/এপি/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৪)