সন্তু লারমা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পার্বত্য চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতা সন্তু লারমা ১৯৪৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটি জেলার মহাপুরমে জন্মগ্রহণ করেন। এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অধিকার রক্ষায় তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান।
তার পুরো নাম জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। বাবা চিত্তকিশোর চাকমা ও মা সুভাষিণী দেওয়ান। তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মহাপুরম জুনিয়র হাই স্কুলে পড়েন। ১৯৫৯ সালে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিককুলেশন পাস করেন। চট্টগ্রামের স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে আইএ এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িত হন।
১৯৬০ সালে কাপ্তাই হ্রদে বাঁধ দিলে মহাপুরম পানিতে ডুবে যায়। অন্য অনেকের মতোই সন্তু লারমাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। তার পরিবার খাগড়াছড়ির পানছড়িতে আবাস গড়ে তোলে। এ সময় বাঁধের প্রকল্প গ্রহণের সময় প্রতিশ্রুত পুনর্বাসন ব্যবস্থা না পাওয়ায় স্থানীয় মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ১৯৬৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি এলাকা হিসেবে আগে দেওয়া স্পেশাল স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়। এতে অসন্তোষ আরও বাড়ে। এ সময় তিনি আগে গঠিত পাহাড়ি ছাত্র সমিতির কাজ জোরদার করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি থানার একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৬ সালে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার জন্য ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ গঠনে তিনি ভূমিকা রাখেন।
১৯৭২ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন সন্তু লারমা। তার ভাই মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ছিলেন এর সাধারণ সম্পাদক। নিয়মতান্ত্রিকভাবে দাবি আদায় সম্ভব হবে না মনে করে ১৯৭৩ সালে তারা সংগঠনের সামরিক শাখা শান্তিবাহিনী গঠন করেন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৭৫ সালে আত্মগোপনে যান। ওই বছর ২৬ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন। ১৯৮০ সালে ছাড়া পান। ১৯৮১ সালে একবার গ্রেপ্তার হয়ে মুক্ত হওয়ার পর আবার আত্মগোপনে যান।
এদিকে, দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়। প্রাথমিকভাবে সমঝোতা হলেও ১৯৮২ সালে অপর গ্রুপের আক্রমণে নিহত হন মানবেন্দ্র লারমা ও আরও ৮ জন। সন্তু লারমা দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত হন। অন্য গ্রুপটি পিছু হটতে থাকে, ১৯৮৫ সালের মে মাসে তারা আত্মসমর্পণ করেন। সে বছর অনুষ্ঠিত সংগঠনের জাতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হলে সভাপতি নির্বাচিত হন। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সশস্ত্র সংগ্রামের পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে সংলাপের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।
সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মোট ২৬টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এপি/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)