দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ভাষার দাবির বিরুদ্ধে অনুকূল পরিবেশ ঝেড়ে ফেলতে ১৯৫১ সাল গুরুত্বপূর্ণ বছর। এই সময় সংগঠকরা প্রতিপক্ষের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেন। একই সময়ে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণও ঘটে। বিশেষ করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি ও স্বদেশে সর্বস্তরে বাংলা প্রচলনের দাবি নিয়ে তৎপরতার ক্ষেত্রে। ছাত্র-যুবসমাজে যেমন এ দাবির পক্ষে সমর্থন ব্যাপক হতে থাকে, তেমনি জনচেতনাকেও তা কিছুটা হলেও স্পর্শ করতে দেখা যায়। এই বছর দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিলে তৃণমূল পর্যন্ত তার প্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

বছরের শুরুতেই ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগের জন্ম। যুবলীগ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতির বিরোধিতা করে। সরকার মুসলিম সংস্কৃতির নামে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ ছিল। কিন্তু যুবলীগ পহেলা বৈশাখ, নবান্নসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য সংস্কৃতি চর্চার দাবিতে উচ্চকণ্ঠ ছিল ।

এ বছরের ১১ মার্চ উদযাপন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ জনগণের নানা তরফ থেকে ওঠা বিভিন্ন ধরনের দাবির মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য দাবি হয়ে ওঠে ততদিনে। বলা যায়, ভাষা আন্দোলনের ফলে পায়ের নিচে মাটি শক্ত হয়ে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এ দিনটি পালনের আয়োজন করে। সংগ্রাম কমিটির প্রচারিত ইশতেহারে বলা হয়, ‘বন্ধুগণ, আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে ঘোষণা করতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করি।’

নারায়ণগঞ্জসহ দেশের একাধিক শহরে ওইদিন সভা, সমাবেশ ও মিছিল করা হয়। স্লোগান ওঠে, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।’

নতুন করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবির সমর্থন সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে আসে। কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত শিক্ষক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে ১৬ মার্চ ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলা ভাষা অবহেলিত হইলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিদ্রোহ করিব।’ স্বনামধন্য আরও কয়েকজন শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবী এই দাবির পক্ষে কথা বলেন।

২৭ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণপরিষদে আবার আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব পেশ করে। আগের বছরের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি এই প্রস্তাবকে উদ্ভট বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী বারবার একই কথা বলেই চলে। কিন্তু ততদিনে আশ্চর্যজনক একটি পরিবর্তন দেখা যায়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রতিনিধিত্বকারী ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের অনেক সদস্য বাংলার পক্ষে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করেন। এরকমই একজন হাবীবুল্লাহ বাহার অ্যাসেম্বলিতে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি ইতিহাস বয়ান করে বাংলার মর্যাদা তুলে ধরেন। দেখানোর চেষ্টা করেন মুসলিম শাসকগোষ্ঠী কীভাবে বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। হাবীবুল্লাহ বাহারের সঙ্গে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই প্রস্তাবকে পূর্ব বাংলার জনগণকে শিক্ষাক্ষেত্রে পঙ্গু করার জন্য একটি দূরভিসন্ধি হিসেবে অভিহিত করে এই প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানান। পূর্ব বাংলার সংসদ সদস্যদের একাংশের বিরোধিতার মুখে প্রস্তাবটি প্রত্যাহারে বাধ্য হয় সরকার।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)