দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ১৯৭১ সাল। বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট থানার অন্তর্গত পরাণপুর গ্রামের গরিব ঢাকি জীবনকৃষ্ণ দাস ‘জীবনঢুলী’ নামেই বেশি পরিচিত ছিল। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে সুখে-দুঃখেই তার জীবন কাটছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরাণপুর আক্রমণ করলে ভারতে পলায়নের সময় তার স্ত্রী ও সন্তানেরা চুকনগর গণহত্যায় নিহত হয়। জীবনঢুলী সীমান্ত পার না হয়ে গ্রামে ফিরে আসে। পরাণপুর গ্রামে তখন মালেক শিকদারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর দোর্দণ্ড-প্রতাপ। রাজাকাররা জীবনঢুলীকে বাঁচিয়ে রাখে রাজাকার বাহিনীর বাজনদার হিসেবে। নানা অপমান আর লাঞ্ছনা সয়ে রাজাকারদেরও ঢোলবাদক হয়ে কাটতে থাকে জীবনঢুলীর দিন।

যুদ্ধের আগে পামের গ্রামের স্বচ্ছল দত্তদের বাড়িতে দুর্গাপূজার ঢাক বাজাতে যেত সে। সেখানে দত্ত বাড়ির সুন্দরী তরুণী বউটির শুচিতা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় সে। যুদ্ধের সময় রাজাকারদের হাতে বন্দী হয় দত্ত বাড়ির বউটি। জানালার শিকের ফাঁকে মাঝে মাঝে সেই বন্দী নারীর মুখ দেখতে পায় জীবনঢুলী।

যুদ্ধের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পরাণপুর গ্রামে আক্রমণ চালালে রাজাকাররা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় যে বাড়িতে দত্ত বাড়ির বউটি আটকে ছিল সেই বাড়িতে আগুন লাগিয়ে যায়। জানালার শিকের মাঝ দিয়ে একবার শুধু দেখা যায় বিউটির ভয়ার্ত মুখ। জীবনঢুলী আগুনে পুড়তে থাকা বাড়িটির চারপাশে পাগলের মত ঘুরে ঘুরে ঢোল বাজাতে থাকে! প্রথমে ধীরে, পরে দ্রুতভাবে প্রচণ্ড উন্মাদনায়।

এমন একটি শোকগাঁথা উপহার দিয়ে শুক্রবার সকালে গণগ্রন্থগার পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান মিলনায়তনে ৯০ মিনিটের চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে চলচ্চিত্রটির কুশীলবদের পরিচয় দেবার পাশাপাশি তাদের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়। তানভীর মোকাম্মেল নির্দেশিত এ চলচ্চিত্রটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছে শতাব্দী ওয়াদুদ, রামেন্দু মজুমদার, ওয়াহীদা মল্লিক জলি, চিত্রলেখা গুহ, জ্যোতিকা জ্যোতি, প্রাণ রায়, উত্তমগুহ, রাফিকা ইভা, ইকবাল হোসেন, পরেশ আচার্য প্রমুখ। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে কিনো আই ফিল্মস।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/কেএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)