এহসান সোসাইটির সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ
হাসিব বিন শহিদ, দ্য রিপোর্ট : সুদমুক্ত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এহসান সোসাইটির ২৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে উঠেছে।
ক্যাশ তছরুপ, ভুয়া ঋণ, ভুয়া পেমেন্ট দেখিয়ে অভিযুক্তরা এ অর্থ আত্মসাত করেছেন বলে সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী রবিউল ইসলাম অভিযোগ করেন। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অডিট ও নিরীক্ষা রিপোর্টে এ অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি দুদকে অবহিত করলে কমিশন তা যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেয়। দুদক সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দুদক সূত্র জানায়, এহসান সোসাইটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এ সংগঠনের সদস্যের কাজ হল- অপচয়, নেশা, আলস্য, পরনিন্দা ও অহংকার না করা এবং তেলাওয়াত, তালিম, দাওয়াত, জিকির ও খেদমত করা। পাশাপাশি ‘প্রতিদিন হাত খরচের ৫/১০ টাকা’ সংস্থায় জমা রাখা। সংগঠনের অধিকাংশ কর্মী নিজ নিজ এলাকার। সংগঠনের নীতি হল- ‘এলাকার কর্মী এলাকার সদস্য, এলাকার টাকা এলাকায় বিনিয়োগ, এলাকার আয় এলাকায় বণ্টন।’
অভিযোগে বলা হয়, ২০০১ সালে মাগুরায় কাজ শুরুর মাধ্যমে এর যাত্রা। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলায় সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। এ সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মী দুর্নীতি শুরু করে। যা সংস্থার অডিট রিপোর্ট ও পরিদর্শন রিপোর্টে উঠে আসে। সংস্থার মোট ১৯৪টি শাখার মধ্যে ২০টি শাখায় ব্যবস্থাপক/সমন্বয়কারী/এফও (মাঠ সংগঠক) দুর্নীতির মাধ্যমে নিজেরা বিত্তবান হয়েছেন এবং উপকারভোগী সদস্যদের ক্ষতি করেছেন। শেরপুর ও যশোর শাখায় দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা অফিসের ভাউচার/লেজার/অডিট রিপোর্ট এবং অন্যান্য প্রামাণ্য দলিলপত্র গায়েব করে।
এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও অভিযুক্তদের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে থানায় মামলা নেয়নি। দুর্নীতি পরায়ন কয়েকজন ব্যবস্থাপকের বেতনের সঙ্গে জীবনযাত্রার মান ও সম্পদের পরিমাণ অসামঞ্জস্য।
অভিযোগে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ২০ হাজার টাকার উপরে আত্মসাত করেছেন এমন অভিযুক্তের সংখ্যা ২৬ জন। এদের মধ্যে খুলনা সদরে কর্মরত এফডিও মো. হাফিজুর রহমান সাত লাখ ৪৫ হাজার টাকা, শরিয়তপুরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেখ মাসুদুজ্জামান চার লাখ ৪৬ হাজার ৮২ টাকা, সাবেক ব্যবস্থাপক আসাবুল হক চার লাখ ১২ হাজার ১৯৭ টাকা, ঝিনাইদহ সদরের ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৭৭৭ টাকা, সমন্বয়কারী মাওলানা আব্দুল হালিম ৩২ লাখ ২১ হাজার ২১২ টাকা, হাট গোপালপুরের সাবেক ব্যবস্থাপক মো. রেহবার হোসেন দুই লাখ ৫৮ হাজার ৭৪০ টাকা, মহেশপুরের ব্যবস্থাপক আব্দুল কুদ্দুস ১৫ লাখ ৫৭ হাজার টাকা, হাট গোপালপুরের সাবেক ব্যবস্থাপক মো. সুলতান মাহমুদ এক লাখ ৯ হাজার ৪২৫ টাকা, কেশবপুরের সাবেক ব্যবস্থাপক আব্দুল মান্নান সাত লাখ টাকা, ঢাকার সূত্রাপুরের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. ইমন হোসেন ১৭ লাখ ৫৭ টাকা, মাগুরার সাবেক এজিএম সেলিম হোসেন ৪২ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৮ টাকা, মাগুরা সদরের ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাক আহম্মেদ চার লাখ ২১ হাজার ৫৬৯ টাকা, শ্রীপুর মাগুরার স্টোরকিপার মো. ফরহাদ হোসেন ৯ লাখ ২৭ হাজার ৯৮৩ টাকা, সাবেক সমন্বয়কারী লিয়াকত আলী তিন লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮ টাকা, মাগুরার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল খালেক এক লাখ ৮০ হাজার, রংপুর সদরের সমন্বয়কারী হাফেজ নাজমুল হক এক লাখ ৯১ হাজার ৮১১ টাকা, তাড়াইলের সাবেক ব্যবস্থাপক মাসুদুল হক পাঁচ লাখ ৩২ হাজার ৩৭১ টাকা, তেরখাদার ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান কাজী ১৮ লাখ ৩১ হাজার ৬০৩ টাকা, চুয়াডাঙা জোনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান ছয় লাখ ৮৯ হাজার টাকা, সাবেক সমন্বয়কারী মাওলানা জাহিদ হাসান ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫১২ টাকা, কুতুবদিয়ার সমন্বয়কারী মো. ইনামুল হক কুতুবী ছয় লাখ টাকা, নড়াইলের সমন্বয়কারী মাওলানা আজমল হোসেন ১৩ লাখ টাকা, জেলা সমন্বয়কারী মাওলানা তৈয়েবুর রহমান আট লাখ ৮৮ হাজার ৩৫৪ টাকা, কুতুবদিয়ার ব্যবস্থাপক ওসমান গণি ২৫ লাখ টাকা, মাকছেদপুরের সমন্বয়কারী ৪৫ লাখ টাকা ও ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/ এনডিএস/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)