বিয়ে করা নিষেধ বাসদ নেতাদের!
দেশের অন্যতম প্রধান বামপন্থী দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ দলটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল- এর কেন্দ্রীয় নেতাদের বিয়ে করা নিষেধ। সবাই মিলে পার্টি অফিসেই যৌথ জীবনযাপন (কমিউন) করেন।
বাসদ সূত্রে জানা গেছে, বিয়ে না করার শর্তটি বাসদের গঠনতন্ত্রে না থাকলেও এটা দলটির অলিখিত নিয়ম। এ জন্য বর্তমানে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে যারা আছেন তাদের সবাই অবিবাহিত।
বর্তমানে বাসদ দুই অংশে বিভক্ত। খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বাসদের ৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তী গত বছরের ১২ এপ্রিল ‘বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি’ গঠন করেন।
ফলে এক অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন খালেকুজ্জামান ও অন্য অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন মুবিনুল হায়দার চৌধুরী।
খালেকুজ্জামান অংশের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, জাহিদুল হক মিলু অবিবাহিত।
মুবিনুল হায়দার চৌধুরী অংশের (বাসদ-কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি) আহ্বায়ক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ও সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, ফখরুল ইসলাম আতিক, মলয় সাহা সবাই অবিবাহিত।
বিয়ে না করার বিষয়ে বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এটা আমাদের পার্টির কোনো নিয়ম নয়। যে বিয়ে করার সে করবে। আর যে বিয়ে না করার সে করবে না।’
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালের ৭ নভেম্বর ভারতের এসইউসিআই নেতা শিবদাস ঘোষের চিন্তা-চেতনা থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) গঠন করে। ১৯৮৩ সালে বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য আ ফ ম মাহবুবুল হক বিয়ের প্রশ্নে পৃথক বাসদ গঠন করেন।
সর্বশেষ ২০১০ সালে বাসদ থেকে বেরিয়ে যান সদ্য প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ সরকার ও সাইফুর রহমান তপন।
বাংলাদেশের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে রয়েছে বাসদের তত্ত্ব ও পদ্ধতিগত মতপার্থক্য। এ দলের নেতাদের কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবে না। সবার সম্পত্তি পার্টির নামে লিখে দেওয়া হয়। পার্টিই সব নেতাদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ বহন করে।
এক সময়ের আদমজী শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বাম দল- শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, বাসদের নেতারা বিয়ে করেন না। কেন করেন না, তা জানি না। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না।’
এ বিষয়ে বাসদ (কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি) নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত অধিকাংশ সংগ্রামীই বিয়ে করার সুযোগ পাননি। পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল ঘোষ ও বিধানচন্দ্র রায় থেকে শুরু করে প্রফুল্ল সেন, অজয় রায় কেউ বিয়ে করেননি। আমরা একটা কাল অতিক্রম করছি। এ জন্য আমাদের বিয়ে করার সুযোগ হচ্ছে না। তবে আমাদের নতুন কমরেডরা বিয়ে করে সংসার ধর্ম পালন করছে।
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)