নিত্যপণ্যের বাজার
হাত বদলে আলুর দাম চারগুণ!
আলুর দাম কম হওয়ায় রাস্তায় ঢেলে কৃষকের প্রতিবাদের খবরে যখন উদ্বিগ্ন কৃষিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কৃষককে আলু সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন, তখন ঢাকার বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। মাঠ থেকে আসার পর আলু কয়েক হাত ঘুরে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। কৃষক দাম না পেলেও ক্রেতারা কিনছেন চারগুণ দামে। এ বিষয়ে পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছেন। আলুর এই দাম বাড়ার পেছনের নানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে দ্য রিপোর্টের অনুসন্ধানে।
জানা গেছে, কৃষকের উৎপাদিত আলু ব্যাপারী (যিনি আলু কিনে ঢাকায় আনেন), আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা হয়ে ক্রেতার কাছে গিয়ে পৌঁছায়। এই চার হাতবদলের পর মাঠের ২ টাকার আলু রাজধানীর বাজারে হয়ে যাচ্ছে ৮-১০ টাকা।
সরেজমিন বাজার ঘুরে জানা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকায়। কিন্তু আলু ব্যাপারী অথবা আড়তদাররা এই আলু মাঠ থেকে কিনে আনছেন ২ থেকে ৫ টাকায়। রাজধানীর আলুবাজারগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা মাঠ থেকে আনার পর দাম বাড়িয়ে দেন। এদের কাছে অসহায় পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা।
পাইকারি ও খুচরা আলু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আড়তদাররা মাঠ থেকে আলু কিনে এনে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যার কারণে বাজারে আলুর দাম বাড়তি। তারা আরও বলছেন, অনেক সময় সব আড়তদার এক হয়ে দাম বাড়াচ্ছেন। তখন তাদের আর কিছু করার থাকছে না। একই কারণে মানে খারাপ আলুও তাদের বেশি দামে কিনতে হয়।
আলুর বাড়তি দাম প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের (নতুন কাঁচাবাজার) পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, দুর্নীতিটা করছে আড়তদাররা। আর পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
তিনি জানান, আড়তদারদের কাছ থেকে ৭ টাকা দরে আলু কিনেছেন তিনি। বিক্রি করছেন ৮ টাকায়। এ সংক্রান্ত একটি রশিদও এই প্রতিবেদককে দেখান তিনি।
তবে বাজারে আলুর বাড়তি দাম প্রসঙ্গে একই বাজারের চাঁদপুর বাণিজ্যালয়ের আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। পরিবহন ভাড়া বেশি। তাই মাঠ থেকে আসার পর আলুর দাম চারগুণ হয়ে যাচ্ছে।
মাঠ থেকে কত টাকা দরে আলু কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই আলু আমরা কিনি না। আলু কিনে ব্যাপারী (মাঠ থেকে যিনি কিনেন)। তারা কিনে ট্রাকযোগে আড়তে নিয়ে আসে। আমরা শুধু বিক্রি করে দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাঠ থেকে প্রতিকেজি গোল আলু ২ টাকায় ও ডায়মন্ড আলু ৫ টাকা দরে কিনে ঢাকায় আনা হয়। এরপর আমরা গোল আলু ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা ও ডায়মন্ড আলু ৭ টাকা দরে বিক্রি করি।’
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট (নতুন কাঁচাবাজার) ও কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, তারা প্রতিকেজি ডায়মন্ড আলু ৯ টাকা ও গোল আলু ৮ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
রাজধানীতে দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও থেকে আলু সরবরাহকারী রহিম উদ্দিন মিয়া ফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ঠাকুরগাঁও থেকে একট্রাক আলু ঢাকায় আনতে ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা লাগে। প্রতি ট্রাকে ১৪ টন আলু ঢাকায় আসে। এক্ষেত্রে প্রতিকেজি আলুর জন্য পরিবহন খরচ পড়ে ২ টাকা।
ঠাকুরগাঁও জেলার ১৪নং রাজাগাঁও ইউনিয়নের খড়িবাড়ী গ্রামের আলুচাষী হুমায়ুন কবির জানান, ডায়মন্ড আলুর জন্য তারা ৪ টাকা ও গোল আলুর ক্ষেত্রে দেড় থেকে ২ টাকা দাম পাচ্ছেন। আলুর দাম নিয়ে তারসহ ওই অঞ্চলের কৃষকের মধ্যে ব্যাপক অসন্তুষ্টি রয়েছে।
জেলার আরেক কৃষক আবদুল মালেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার আলু চাষে প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা। এক বিঘায় তার ৮০ মণ আলু হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে এর দাম হল ৭ হাজার টাকার মতো। এতে আবাদের খরচ উঠবে না।
(দ্য রিপোর্ট/এএইচএস/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)