হাজিদের সঙ্গে প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে ১৯৪টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির শুনানি শেষ হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দায়ী হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য রিপোর্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে হজ এজেন্সিদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাহার বলেন, ‘প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক যে কোনো ব্যবস্থা নিলে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন।’

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে ১৯৪টির বিরুদ্ধে হাজিদের প্রতারণাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি গত ৪-৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অভিযুক্তদের ডেকে শুনানি করে। সুনির্দিষ্টভাবে এ সব এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানা গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (হজ) মো. জাহাঙ্গীর আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হজ যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণাসহ নানা অভিযোগ, মক্কা-মদিনায় আদিল্ল অফিসের রিপোর্ট ও প্রশাসনিক টিমের পরিদর্শনের সময় ধরা পড়া ত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কী ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতারণার ধরন হচ্ছে, হাজিদের ফেলে রেখে এজেন্সির গা-ঢাকা দেওয়া, হাজিদের শেষ পর্যন্ত হজে নিতে না পারা, হাজিদের যথাসময়ে চুক্তি অনুযায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে না পারা, নিম্নমানের বাড়িতে রাখা, নিম্নমানের খাবার দেওয়া, সময়মত আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারা ইত্যাদি।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুনানি করেছে। তারা অভিযোগের সত্যতা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়কে শাস্তির সুপারিশ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এরপর মন্ত্রণালয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

কবে নাগাদ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট এখনও জমা দেয়নি। তারা জমা দিলে আশা করছি, আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

এ ব্যাপারে হজ এজেন্সিদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি ইব্রাহিম বাহার দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিলে আমাদের কিছু বলার নেই। বরং হাব থেকে ওই সব এজেন্সিকে আমরাও বহিষ্কার করব। কিন্তু দোষীদের সঙ্গে যেন নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার না হয়।’

তিনি বলেন, ‘১৯৪টি এজেন্সির বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে এর মধ্যে কিছু কিছু অভিযোগ রয়েছে, যা সৌদি সরকার উত্থাপিত। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভুল বোঝাবুঝি দূরসহ অভিযোগগুলো মার্জনা করে দেয় সৌদি সরকার। কিন্তু সৌদি সরকার ক্ষমা করলেও তাদের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে অনেক এজেন্সির বিরুদ্ধে তদন্তের শুনানি করেছে মন্ত্রণালয়। এটা না করলেও হতো বরং সতর্কের জন্য ওই সব এজেন্সিকে নোটিশ দিলেই ভালো হতো।’

হাব সভাপতির মতে, ৫০-৬০টি এজেন্সির বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা বা অন্যান্য গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, এ সব যদি প্রমাণিত হয় তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই। দোষ প্রমাণিত হলে হাবও তাদের সদস্যপদ বাতিল করবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের হজ ব্যবস্থাপনায় অংশ নেওয়া ৬২৮টি এজেন্সির মধ্যে অন্তত ৫০০ এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে অনেক অভিযোগের নিষ্পত্তি তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়। মক্কা হজ মিশনেও অনেক অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান করে অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়। এবার শুধু গুরুতর অভিযোগগুলোই আমলে নেওয়া হয়েছে। ফলে আনুষ্ঠানিক অভিযুক্ত এজেন্সির সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে কিছু কম। তবে এ বছর অভিযুক্ত এজেন্সির মধ্যে নতুন লাইসেন্স পাওয়া এজেন্সির সংখ্যাই বেশি।

গত মহাজোট সরকারের আমলে প্রায় ৭০০ নতুন লাইসেন্স প্রদান করা হয়। এদের অধিকাংশই ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো হজ ব্যবস্থাপনা শুরু করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশি সর্বমোট হাজি ছিল ৮৭ হাজার ৭৫৪ জন। আগের বছর ২০১২ সালে ৩৫০টি হজ এজেন্সি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেছিল। তার মধ্যে ৬০টি ছাড়া বাকি সবগুলোই অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল। ওই বছর হাজি ছিল এক লাখ ১০ হাজার।


(দ্য রিপোর্ট/কেএ/সা/এইচএসএম/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪)