সুমন ইসলাম পেশায় সাংবাদিক। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সামাজিক ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। পেশাগত জীবনে কাজ করেছেন দৈনিক ভোর, আজকের কাগজ, মানবজমিন, যায়যায়দিন প্রতিদিন, বাংলার বাণী, যুগান্তর ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায়। তার উল্লেখযোগ্য বই- ব্ল্যাকহোল ও মহাজাগতিক রহস্য, মহাকাশের অজানা কথা, মহাশূন্যে ঘটনার ঘনঘটা। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হোসেন শহীদ মজনু

এবা মেলায় কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?

বই লেখায় আমি আসলে নতুন। এবারের মেলায় আমার তিনটি বই বের হয়েছে। গত মেলায় দুটি বই এসেছিল। সব মিলিয়ে আমার লেখা পাঁচটি বই-ই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। দুটি বই যন্ত্রস্থ হয়েছে। আশা করছি এই মেলাতে এ দুটো বইও আসবে। সবগুলো বই প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা ‘মহাকাল’।

প্রকাশিত বই সম্পর্কে বলুন...

এবারের মেলায় এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বই তিনটি মহাকাশ বিজ্ঞানবিষয়ক।

‘ব্ল্যাকহোল ও মহাজাগতিক রহস্য’ বইতে উঠে এসেছে ব্ল্যাকহোল তথা কৃষ্ণগহ্বরের আদ্যোপান্ত। এ ছাড়া রয়েছে ডার্ক এনার্জি বা অন্ধকার শক্তি, ম্যাগনেটার, নিউট্রিনো, পালসার, কোয়াসার, ধূমকেতু, নীহারিকা, গ্যালাক্সি, সুপারনোভা, ঈশ্বর কণা বা গড পার্টিকেলসহ নানা তথ্য-উপাত্ত।

‘মহাকাশের অজানা কথা’ বইয়ের নামেই বোঝা যাচ্ছে এতে রয়েছে মহাকাশে নিয়মিত ঘটে চলা বিভিন্ন কাহিনী। গ্যালাক্সি ভরপুর এলিয়েন তারকারাজিতে দানব, মাঝারি এবং ক্ষুদ্র কৃষ্ণগহ্বর যত্রতত্র, মহাজাগতিক গ্রহের সন্ধান মিলছে প্রায় নিয়মিত, সবচেয়ে শীতল বাদামি বামন তারার সন্ধানও পাওয়া গেছে। শুষ্ক গ্রহ শুক্র এক সময় ছিল পানিতে পূর্ণ, পৃথিবীতে আঘাত হানা উল্কায় রয়েছে লাখ লাখ অণু, চারটি গ্যালাক্সি একীভূত অর্থাৎ একে অপরের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে এমন বিরল দৃশ্যও ধারণ করা গেছে টেলিস্কোপে। এ সব তথ্য বইটিতে আছে।

‘মহাশূন্যে ঘটনার ঘনঘটা’ বইতেও রয়েছে মহাকাশে প্রতিনিয়তই ঘটে চলা বিভিন্ন ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছে মহাকাশ সৃষ্টির প্রথমদিকের অতি উজ্জ্বল একাধিক গ্যালাক্সির সন্ধান, আন্তঃনাক্ষত্রিক মহাকাশে দুটি জটিল প্রকৃতির সমৃদ্ধ অণু চিহ্নিত, শুক্র এবং পৃথিবীর মধ্যে রয়েছে অনেক মিল, সূর্যের সাম্প্রতিক অবস্থা বিস্মিত করেছে বিজ্ঞানীদের, আমাদের সৌরজগতের বাইরে একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে পানির অস্তিত্ব চিহ্নিত, ক্ষুদ্র গ্রহ বুধের চুম্বক ক্ষেত্রের চারদিকে চুম্বক তরঙ্গের ‘নৃত্য’ দৃশ্য দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এমন নানা তথ্য রয়েছে বইটিতে।

প্রকাশনার কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকলে বলুন...

আসলে আমি যে একজন লেখক হতে পারি বা আমার বই বের হতে পারে সে কথাটা প্রথম মাথায় ঢোকান আমার পাঁচটি বইয়ের প্রকাশক মনিরুজ্জামান ভাই। উনি বলার আগে কখনই মাথায় আসেনি যে আমি লিখব, সেটা বই আকারে বের হবে এবং বাজার থেকে পাঠক গিয়ে আবার সেই বই কিনবে! তাই বুঝতেই পারছেন প্রকাশক আমাকে কতটা সহযোগিতা করেছেন।

বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন?

এ ব্যাপারে প্রকাশকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি সারা বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করেন তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হবে। ডিজিটাল যুগে আমরা বাস করছি, এটা মনে রাখা দরকার। তাই বইয়ের পাঠক তৈরিতে নতুন কৌশল বের করতে হবে। বাণিজ্যিক কারণে যেন-তেন বই না প্রকাশ করে মানসম্মত বই প্রকাশ করতে হবে।

মেলায় বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন...

যার যে বিষয়ে আগ্রহ সে সেই বিষয়ের ওপরই বই কিনবেন এটাই স্বাভাবিক। আমি রেফারেন্স বই বেশি কিনি বলে সবাই এমনটা করবে তার মানে নেই। তাই আগ্রহের বিষয়টি টার্গেট করেই বই কেনার পরিকল্পনা করা উচিত। পাঠকদের উদ্দেশে বলব- মেলায় যান এবং অন্তত একটি হলেও বই কিনুন।

বইমেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

স্থান সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়েছে। তবে দুই জায়গায় মেলা ভালো লাগেনি। মেলা হতে হবে এক জায়গায়। বক্তৃতা, মোড়ক উন্মোচন বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলা একাডেমিতে হতে পারে। বইয়ের স্টলগুলো সব হতে হবে এক জায়গায়। দুই জায়গাতেই যদি বইয়ের স্টল থাকে তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

কেন লেখেন?

মনের আনন্দে লিখি। লিখতে ভালো লাগে। ছাপা হওয়াটা সব সময় মুখ্য নয়। লেখার অভ্যাস থাকলে ভাষার ওপর দখলটাও বজায় থাকে। নইলে জং ধরে যায়। নিজেকে মূর্খ মনে হয়।

লেখালেখির ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?

আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হচ্ছে মহাকাশ বিজ্ঞান। আমি অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এ বিষয়ে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রথমে পড়াশোনা এবং পরে আরও লেখালেখি করতে চাই। মহাকাশ বিজ্ঞানটা যেন সহজবোধ্য হয়ে উঠে, আমার সেই চেষ্টা করতে ইচ্ছা করে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএম/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪)