বাংলাদেশে ইসলামবিরোধীদের প্রতিরোধের ডাক ‘আল-কায়েদার’
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশ সম্পর্কিত বক্তব্য সংবলিত আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তা দুই খণ্ডে ইউটিউবে প্রচারিত হচ্ছে। ওই অডিওটি মূলত আল-কায়েদার মিডিয়া প্রোডাকশন হাউজ ‘আস সাহাবের’ তৈরি করা এবং ‘জিহাদোলজি ডটনেট’ নামের একটি ওয়েবসাইটে গত ১৪ জানুয়ারি পোস্ট করা হয়।
অডিওতে বলা হয়, বাংলাদেশ দিনকে দিন ‘ভারতের অধীনস্ত ভৃত্যে’ পরিণত হচ্ছে এবং একটি ‘জেলখানায়’রূপান্তরিত হচ্ছে।‘বাংলাদেশ : এ ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অফ সাইলেন্স’ শিরোনামে ওই অডিও বার্তাটি প্রকাশ করা হয়।
এই বার্তায় বলা হয়, বাংলাদেশে ইসলামবিরোধী ক্ষমতাসীন ‘ইসলামবিরোধী সেক্যুলার সরকারের ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আল-কায়েদা প্রধান এই ‘হত্যাকাণ্ড’কে ইসলামের বিরুদ্ধে ‘ক্রুসেড’ আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
অডিও বার্তায় আরও বলা হয়, ‘সারা দুনিয়ায় আজ মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চলছে। আর পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো হত্যাকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এ সত্য গোপন করছে।’
ওই অডিও বার্তায় গত বছর ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি ও তাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর অ্যাকশনের কিছু ছবিও দেখানো হয়। এরপর বলা হয়, ‘বাংলাদেশে আজ এভাবেই মুসলিমদের রক্ত ঝরছে। অথচ মুসলিম বিশ্বের এ ব্যাপারে খবর নেই।’
জাওয়াহিরির নামে প্রচারিত এই বার্তায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার যাতে ভারতীয় এজেন্ট, পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদরাও জড়িত।’
‘এতে পুরো ভারতবর্ষের মুসলিম উম্মাহ এবং বিশেষকরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলিম উম্মাহ আক্রান্ত হচ্ছে।’
‘বাংলাদেশে ইসলামের মৌল বিশ্বাস ও রসুলের (স.) বিরুদ্ধে আজ যে অপরাধ ঘটানো হচ্ছে, তার বীজ বপন করেছে এই ক্রিমিনালরাই। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া তাদের উদ্দেশ্য ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ঠেকানো বা পাকিস্তানি সামরিক শাসন থেকে মুক্তি- কোনোটাই এদের মূল লক্ষ্য ছিল না।’
‘এদের আসল লক্ষ্য ছিল এই উপমহাদেশে মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি দুর্বল করা, আঞ্চলিক বিভেদ আর যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এর মৃত্যু ডেকে আনা। আর সর্বোপরি, মুসলমানদের আসল সম্পদ- তাদের ধর্ম বিশ্বাসকে ছিন্নভিন্ন করা।’
বার্তায় বলা হয়, ‘পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তানে আজ যা হচ্ছে- তা সেই ‘শয়তানি পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নেরই প্রাথমিক পর্যায় চলছে মাত্র। আর উপরে উল্লিখিত ক্রিমিনালরাই এর অগ্রভাগে রয়েছে।’
‘কাল যারা বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ চালাল, আজ তারাই পাকিস্তানে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। একইভাবে বাঙালির সম্মান রক্ষার ধুয়া তুলে যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল, তারাই আজ বাঙালির বিশ্বাস, সম্মান, জীবন ও সম্পদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।’
জাওয়াহিরি বলেন, ‘তারা দাবি করে, ইসলাম ও এই উপমহাদেশের মুসলমানদের রক্ষায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় আগে তারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছিল। আর আজ আমরা যে পাকিস্তান দেখি, সেখানে শরিয়ার কোনো স্থান নেই, নেই কোনো স্বাধীনতা ও সম্মান।’
‘এর পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র- সরকার, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সবই পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ক্রসেডারদের ভাড়া করা বাহিনী হিসেবে কাজ করছে।’
‘একইভাবে তারা দাবি করে ৪০ বছর আগে তারা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলস্বাধীনতা এবং জনগণের মুক্তির জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে বিরাট এক কারাগারে, যেখানে মুসলমানদের সম্মান ও পবিত্র স্থানগুলো অপবিত্র করা হচ্ছে। ক্রুসেডারদের হয়ে তাদের ওপর চালানো হচ্ছে হত্যা-নির্যাতন, যে ক্রুসেডাররা রাজনৈতিক, সামরিক ও আদর্শগতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।’
‘তাদের দাবি, বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করা হয়েছে স্বাধীনতার জন্য। অথচ বাংলাদেশ আজ পুরোপুরি ভারতের অধীনস্ত হয়ে পড়ছে।’
জাওয়াহিরি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এ দুটি রাষ্ট্রই ইসলামবিরোধী। ফলে তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দিনকে দিন আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।’
‘আর এ বিষয়টা সম্পর্কেই মুসলিমদের সবার আগে সজাগ হতে হবে। যাতে মুসলিমরা দুর্ভাগ্য, অপমান ও বিদেশী শক্তির দাসত্ব থেকে মুক্তির পথে এগিয়ে যেতে পারে।’
(দ্য রিপোর্ট/এমএটি/জেএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪)