কাফি কামাল দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। কবিতা, গল্প ও ভ্রমণকাহিনী নিয়ে তার একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ডলুতীরে টংঘর, তীরবর্তী হাওয়াঘর, ঋতুরঙ্গ, মেইট্টাল এবং কুতুব মিনার থেকে কন্যাকুমারী। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওয়াহিদ সুজন

এবারের মেলায় কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?

এবার একটি বই মেলায় আসবে। আমার চতুর্থ গল্পগ্রন্থ ‘কন্যারাশির জাতক’। বইটি প্রকাশ করছে ‘জয়তী’, স্টল নম্বর-২৫০-২৫১। আরও দুটি বই প্রকাশের প্রস্তুতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পাল্টেছি।

এই বই সম্পর্কে বলুন?

‘কন্যারাশির জাতক’ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে সাতটি গল্প। প্রতিটি গল্পই জীবনঘনিষ্ঠ। কারাবন্দী কয়েকজন রাজনীতিকের নীরস জীবনে ঢেউ তোলা কিছু তুচ্ছ ঘটনা এবং বারান্দার গ্রিল পরিষ্কাররত এক বালিকার ভাগ্য নিয়ে লেখা ‘মেয়েটি’। এক প্রৌঢ়ের লাম্পট্য এবং পতনের গল্প ‘ঊনষাটে’। ‘বহুগামিনী’ গল্পটি একজন কবিকে নিয়ে যিনি বার বার মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েছেন এবং ফের যুক্ত হয়েছেন। মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন কবিতা কীভাবে হয়ে উঠল বহুগামিনী। ‘কন্যারাশির জাতক’ একজন ঘোরগ্রস্ত কন্যারাশির জাতক, ইন্টারনেট নির্ভর ভুয়া জ্যোতিষির ভবিষ্যৎ বর্ণনা এবং কয়েকটি কাকতালীয় ঘটনা নিয়ে রচিত। স্বামীর সন্ধান ও অধিকার আদায়ের দাবিতে এক বিদেশি বধূকে নিয়ে লেখা গল্প ‘টান’। প্রতিবেশী দেশে ট্রেন চড়তে গিয়ে এক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবারের সঙ্গে পরিচয় ও তাদের তরুণী কন্যার মনে টোকা দেওয়ার গল্প ‘প্রতিবেশিনী’।

তরুণরা বই প্রকাশে সাধারণত কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন?

সৃজনশীল তরুণ লেখকদের বই প্রকাশের সুযোগ সীমিত। তরুণদের গুরুত্ব দিয়ে কিছু প্রকাশনী তাদের বই ছাপে। বেশিরভাগ তরুণ লেখকদের বই প্রকাশ হয় নিজের অর্থে। কেউ স্বীকার করে কেউ করে না। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। আসলে পাঠকদের দৃষ্টি যতদিন কতিপয় জনপ্রিয় লেখকের বাইরে না যায়, ততদিন এ পরিস্থিতির উত্তরণ কঠিন। তরুণদের বইয়ের প্রতি পাঠকের আগ্রহ বাড়লে প্রকাশকরাও তরুণদের বই প্রকাশে আগ্রহী হবেন। সৌভাগ্যবশত গত বছর থেকে আমি প্রকাশকের আশীর্বাদপুষ্ট।

বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন?

বইকে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে নিয়মিত বইমেলার আয়োজন জরুরি। পাশাপাশি প্রকাশকদের সারাদেশে একটি চেইন রিলেশন দরকার। বেশিরভাগ প্রকাশকেরই তা নেই। তারা চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া ও রাজশাহীর বাইরে কোনো জেলায় বই পাঠান না। লেখকদের পক্ষে সহযোগিতা সম্ভব হলেও বইকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ও প্রকাশকদের ভূমিকাই হবে প্রধান। বই স্বশরীরে প্রান্তে পৌঁছাতে এখনও সম্ভব না হলেও ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেখা ছড়িয়ে যাচ্ছে কেন্দ্র থেকে প্রান্ত, প্রান্ত থেকে সারা বিশ্বে।

এবারের বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন?

কখনও পরিকল্পনা করে বই কিনি না। আমি ঢাকায় অবস্থান করার সুবাদে সহজে ভালো বইগুলোর সন্ধান মিলে যায়। প্রতিমাসেই সাধ্য অনুযায়ী বই কিনি। তবুও মেলা থেকে অন্তত দশজন তরুণের কবিতা ও গল্পের বই এবং কিছু অনুবাদ ও ভ্রমণকাহিনী কিনব।

বই মেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বইমেলার সম্প্রসারণ সময়ের দাবি। এখন যারা বাচ্চাদের জন্য বই কিনবে তারা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢু মারবে। যারা সব ধরনের বই খুঁজবে তারা উদ্যানের মেলায় ঢু মারবে। মেলা সম্প্রসারণের কারণে ভিড় কমবে। তবে বিক্রি-বাট্টাসহ সার্বিক বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা অনুচিত বিবেচনা করি।

লেখালেখির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমি মূলত কবিতা ও গল্প লিখি। নানা সূত্রে, কিছু প্রবন্ধ এবং বিষয়ভিত্তিক লেখাও লিখছি। কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ মিলিয়ে আমার অন্তত সাতটি বইয়ের কাজ ষাট-সত্তরভাগ সম্পন্ন হয়ে আছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ও চট্টগ্রামের ভাষার ওপর প্রবন্ধ সংকলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী মেলায় একাধিক বই প্রকাশের পরিকল্পনা আছে।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এপি/সা/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪)