থমকে আছে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন প্রক্রিয়া
তমাল ফেরদৌস, মৌলভীবাজার : অদৃশ্য কারণে থেমে আছে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়াটি। দেশের সিংহভাগ চা উৎপন্ন হয় সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ১৩৩টি বাগান থেকে।
এদিকে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে কয়েক দফা আন্দোলন করার পরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় শিগগিরই আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির পরিদর্শনপরবর্তী ইতিবাচক রিপোর্টের ভিত্তিতে নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে অচিরেই বিল্ডিং স্টাকচার প্রণয়নের কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও চা বাগান সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলায় ২০টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৯১টি ও হবিগঞ্জ জেলায় ২২টি চা বাগান রয়েছে। তিন জেলার মোট ১৩৩টি চা বাগানের উত্তোলিত চা নিলামের জন্য চট্টগ্রাম নিলাম কেন্দ্রে পাঠাতে হয়। এতে করে উত্তোলিত চায়ের গুণগতমান নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মোটা অঙ্কের পরিবহন ভাড়া গুনতে হয় ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের। এ ছাড়া এখানে নিলাম কেন্দ্র না থাকায় বাগানগুলোতে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মরত চা শ্রমিক নারী-পুরুষরা স্থায়ী নিয়োগ পেতে সমস্যার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। নিলাম কেন্দ্র স্থাপন হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
২০০৮ সালের ১৮ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর চেম্বার অ্যান্ড কমার্স ইন্ডাস্ট্রি চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন করে। এরপরই টনক নড়ে সরকারের।
চট্টগ্রামের পাশাপাশি চায়ের রাজধানী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্যারালাল আরেকটি চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় সিলেট বিভাগজুড়ে। ২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে স্থানীয় চৌমোহনা চত্বরে একটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৩ সালের ২৩ মে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আহ্বায়ক বেগম তহুরা আলী এমপির নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট সংসদীয় কমিটি শ্রীমঙ্গল উপজেলায় স্থাপিত বিভিন্ন চা কোম্পানির নির্মাণাধীন ওয়ার হাউস এলাকা, চা বাগান, ফ্যাক্টরি ও বিভিন্ন আবাসিক হোটেল পরিদর্শন করেন। এ সময় চা বোর্ডের চেয়াম্যান মেজর জেনারেল এমএ সালাম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের সদস্য মো. আবুল কাসেমসহ একাধিক বাগান মালিক, চা নিলামকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান, চা নিলাম কেন্দ্র বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক, চা বোর্ডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিনিধি দল বিভিন্ন চা বাগান এলাকা পরিদর্শন করে চা শিল্পের উন্নয়ন, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা, চা পাতা রক্ষণাবেক্ষণসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত একটি চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে স্থাপনের ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। অচিরেই একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দফতরে দাখিল করবেন বলেও শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্র বাস্তবায়ন কমিটি ও মৌলভীবাজর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানান প্রতিনিধিরা। কিন্তু প্রতিনিধি দল ঢাকাতে ফিরে যাওয়ার পর এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ আজও গ্রহণ করেনি।
মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. কামাল হোসেন দ্য রিপোর্টকে জানান, প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শিগগিরই নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক উদ্যোগ দেখা না গেলে চেম্বার পুনরায় আন্দোলনে নামবে বলেও জানান তিনি।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় সব চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা করি অচিরেই বিল্ডিং স্টাকচারের কাজ শুরু হবে।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও মৌলভীবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মহসীন আলী দ্য রিপোর্টকে জানান, শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে সরকার খুবই আন্তরিক। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন শেষে নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে ইতিবাচক দিকগুলো উল্লেখপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেছে। অচিরেই প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/টিএফ/এনডিএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪)