ওবায়দুল ইসলাম চঞ্চল, দ্য রিপোর্ট : যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন দর্শকে ঠাসা। বিপুল উল্লাস-উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ছে সবাই। আক্রমণে পাল্লা ভারি সফরকারী শেষ জামালেরই। তারপরও ভাটা নেই উৎসাহে। সঙ্গে সমতার পালাও যেন শেষ হচ্ছিল না। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে; অতিরিক্তি সময়ও গড়িয়ে গেছে দীর্ঘ এক ফাইনালের। টাইব্রেকারপর্বও শেষ। এবার সাডেন ডেথের পালা। সেখানেই হেরে গেছে বাংলাদেশের শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। অথচ খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ ছিল ওই ক্লাবটিরই। কিন্তু স্থানীয় মোহামেডানের ফুটবলারদের সঙ্গে রেফারি খেলেই হারিয়ে দিয়েছে জামালকে। অযথাই লালকার্ড দেখিয়ে সনি নর্দেকে হটিয়ে ম্যাচটি ওদের করে দিয়েছে। নর্দেকে হারিয়েও শেখ জামাল খেলেছে দুর্দান্ত। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

কলকাতা মোহামেডানের মেহজারউদ্দিনের গোল সাডেন ডেথে। তারপর শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের দিদারুলের শট রুখে দিয়েছেন নাছিম আখতার। ওই গোলেই শনিবার শেষ হয়েছে আইএফএ শিল্ডের ১১৮তম আসরের মাহাকাব্যিক এক ফাইনাল ম্যাচ। শেখ জামালকে হারিয়ে ৪৩ বছর পর আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছে কলকাতা মোহামেডান। ১৯৭১ সালে শেষ শিল্ড জিতেছিল তারা।

ম্যাচের নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে অমীমাংসিত থেকেছে। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও গোলের দেখা পায়নি কোনো দল। পরে ভাগ্যের পরীক্ষা টাইব্রেকারে ১০টি শটে ৩ করে গোল পেয়েছে ২দল। সাডেন ডেথে গোল পেয়ে ১(৪)- ১(৩) এগিয়ে থেকে শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে কলকাতা মোহামেডান। সঞ্জয় সেন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে টানা ১২টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে কলকাতার এ দলটি।

১৯৯৫ সালে ভারতের ঐতিহ্যবাহী এ ফুটবল আসরটির ফাইনালে খেলেছিল ঢাকা মোহামেডান। ওই আসরে ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের বিপক্ষে টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে হেরে রানার্সআপ শিরোপা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল সাদা-কালো শিবিরকে। এটাই ছিল এতোদিন আইএফএ শিল্ডে বাংলাদেশের কোনো ক্লাবের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কলকাতা মোহামেডান ও শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচটি বেশ জমজমাট ছিল। ম্যাচের ৪ মিনিটেই আক্রমণে গিয়েছে কলকাতা মোহামেডান। বক্সের বাইরে থেকে নির্মল ছেত্রীর ফ্রি-কিক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোসিমারের হেড বারে ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে। ম্যাচের ১২ মিনিটে মধ্যেই ৪টি কর্নার পেয়েছিল শেখ জামাল। ১৩ মিনিটে মামুনুলের কর্নার থেকে এমেকা ডার্লিংটনের হেড এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে এসেছিল। তা না হলে গোল পেতে পারতো অভিজাত পাড়ার দলটি। ২৬ মিনিট সনি নর্দেকে বাজে ভাবে ট্যাকল করার অপরাধে হলুদ কার্ড দেখেছেন রাকেশ মাসি। এ কারণে বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক দিয়েছেন রেফারি সন্তোষ কুমার। ২৮ এ ফ্রিকিককে গোলে পরিণত করেছেন সনি নর্দে। তার ফ্রি-কিক মোহামেডানের গোলরক্ষক লুই ব্যারেটো লাফিয়েও নিজের আয়াত্বে নিতে পারেননি। বল ক্রসবারে লেগে জালে জড়িয়েছে (১-০)। ৩৫ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগ এসেছিল মোহামেডানের। পেন ওর্জির ফ্রিকিক লুসিয়ানোর হেড নবীর পায়ে লেগে গোলরক্ষক হিমেলের হাতে। প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে স্বাগতিক দলকে সমতা এনে দিয়েছেন ডিফেন্ডার মেহরাজউদ্দিন। জোসিমারের থ্রু পাসে বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো সুযোগ সন্ধানী এ ফুটবলার বল পেয়েছিলেন। পরে শট নিতে দেরি করেননি তিনি। তার শটে গোলরক্ষক হিমেল কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগের বল জালে জড়িয়েছে (১-১)।

বিরতির পর ৪৯ মিনিটে মামুনুলের কাছ থেকে বল পেয়ে সোহেল রানার বাঁ পায়ের শট জাল খুঁজে পায়নি। ৬৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সনি নর্দের বুলেট গতির শট গোলরক্ষক লুই ব্যারেটো ঝাঁপিয়ে পড়ে রক্ষা করেছেন। ৬৯ মিনিটে নবির ক্রসে বক্সে থেকে পেন ওর্জির শট বক্সের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে। ৮০ মিনিটে সনি নর্দের ফ্রিকিক এমেকা ডার্লিংটনের হেড জাল খুঁজে পায়নি। এভাবেই গোল মিসের মহড়া চলছিল।

কিন্তু ৮২ মিনিটে সনি নর্দেকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রেফারি সন্তোষ কুমার। অন্যায়ভাবে নর্দেকে লালকার্ড দেখানোর বিষয়টি ব্যালেন্সড করতে কলকাতার মোহামেডানের লুসিয়ানোকেও দ্বিতীয়বার হলুদ (লাললার্ড) দেখিয়েছেন তিনি। ঘটনা খুবই নির্মম; মাঠে সনি নর্দেকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন লুসিয়ানো। পরে তাকে ছাড়াতে গেলে চোখে আঘাত পাওয়ার অভিনয় করেছে কলকাতা মোহামেডানের ওই ফুটবলার। ওই অনভিপ্রেত ঘটনার মাধ্যমেই শেখ জামালকে রুখে দেয়া হয়েছে। যদিও ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের ১ মিনিটের মাথায় প্রায় মধ্য মাঠ থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন ওয়েডসন। কিন্তু আসল কাজটি করতে পারেননি। ২ ডিফেন্ডারের মাথার ওপর দিয়ে মারা বলটি পোস্ট ঘেসে মাঠের বাইরে চলে গিয়েছে। ম্যাচের নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়েছে। পরে ম্যাচ গড়িয়েছে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।

আবার ম্যাচের ৯৩ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল শেখ জামাল। বক্সের মধ্য থেকে মামুনুলের ক্রসে ওয়েসনের হেডটি পোস্টে যায়নি। এক মিনিট পরই পেন ওর্জির শট গোল লাইনের সামনে থেকে বল ক্লিয়ার করেছেন ইয়ামিন মুন্না। এটা ছিল ম্যাচের সেরা সেভ। ১১৫ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ওয়েডসনের শট পোস্ট ঘেসে মাঠে বাইরে চলে গিয়েছে। ১১৭ মিনিটে আলি আমিসুর থ্রু পাসে এক ডিফেন্ডারকে গতির লড়াইয়ে হারিয়ে বক্সে ঢুকে গিয়ে ওয়েডসনের করা শটটি গোলরক্ষক লুই ব্যারেটো নিখুঁতভাবে রক্ষা করেছেন। ১১৮ মিনিটে তার পরিবর্তে মাঠে নেমেছিলেন নাছিম আখতার। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটও গোল শূন্যভাবে শেষ হলে ম্যাচ গড়িয়েছে টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে কলকাতা মোহামেডানের থেং তাং পাইতের প্রথম শটটি গোলরক্ষক জিয়ার হাতে লেগে জালে জড়িয়েছে (১-০)। দ্বিতীয় শট শেখ জামালের হয়ে ওয়েডসন সমতায় ফিরিয়েছেন (১-১। তৃতীয় শটে মনিষের গোলে ফের এগিয়ে গিয়েছে কলকাতা মোহামেডান (২-১)। চতুর্থ শটে শেখ জামালকে ফের সমতা এনে দিয়েছে নাসির (২-২)। পঞ্চম শটে নির্মল ছেত্রীর গোল (৩-২)। ষষ্ঠ শট আলী পোস্টের ওপর দিয়ে মেরেছেন। আর মোহামেডানের জসিমারের সপ্তম শটটি পোস্টে লেগে ফিরে এসেছে। অষ্টম শটে ইয়াসিন খান গোল করেছেন (৩-৩)। নবীর নবম শট ফিরিয়ে দিয়েছেন জামালের জিয়া (৩-৩)। জয়ের আরো কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে লিংঙ্কন। পারেননি দশম শটে গোল করতে।

(দ্য রিপোর্ট/ওআইসি/এএস/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৪)