খুলনা ব্যুরো : খুলনার গ্রাম, জনপদ এখন মুখোর হয়ে উঠেছে নির্বাচনী প্রচরণায়। হাটে-বাজারে, চায়ের স্টলসহ সবখানে উপজেলা নির্বাচনের আমেজ।

জাতীয় নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে না পারায় এবং আওয়ামী লীগের একদলীয় নির্বাচনের প্রতিশোধ নিতে এবার খুলনার ভোটাররা একাট্টা হয়েছেন।

তবে অনেক স্থানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা প্রশাসনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিএনপিসহ ১৯ দলের নেতাকর্মীদের নামে বিগত দিনের রাজনৈতিক উদ্দেশে দায়ের করা মামলাগুলো কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা জেলার কয়রা উপজেলায়। এই উপজেলায় ১৯ দলের জামায়াতের চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিন চলছে প্রশাসনের ব্যাপক খবরদারি। এ ছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সুন্দরবন ঘেঁষে অবস্থিত কয়রায় জামায়াতের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলনা আ ক ম তমিজ উদ্দিন। তার প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের জিএম মহাসীন রেজা।

২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রশাসনকে ব্যবহার করে অল্প ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হলেও এবার চিত্র ভিন্ন। গত পাঁচ বছরে আইলাপরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় দলীয় সমর্থকদের মুখ দেখে ত্রাণ বিতরণসহ নানা অনিয়মের কারণে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জনবিচ্ছিন্ন।

তবে প্রায় ৩০ হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভোটার থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন। তাদের মতে, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটাররা আর যাই হোক জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই বিগত দিনে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। তারা এবার চোখ বুজে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেবেন না। অনেকেই ভোটকেন্দ্রে নাও যেতে পারেন। আর জোট হিসেবে কয়রায় সব সময়ই বিএনপি ও জামায়াতের ভোটের সংখ্যা বেশি।

গত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কয়রায় বেশি ভোট পায় চারদলীয় জোটের প্রার্থী। কিন্তু অপর উপজেলা পাইকগাছাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেশি ভোট পাওয়ায় জিতে যায়।

অন্যদিকে, মহানগর খুলনার উত্তর সীমান্তের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব ও আতাই নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা দীঘলিয়া উপজেলায় এবার বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীরা আছেন সুবিধাজনক অবস্থানে। গত নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন মল্লিক বিএনপি সমর্থকদের ভোট নিয়ে বিজয়ী হন। এবার মহিউদ্দিন মল্লিক দলীয় মনোনয়ন পাননি এবং তিনি নির্বাচন করছেন না। সে কারণে এলাকার আওয়ামী লীগবিরোধী ভোট এবার যাবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাইফুর রহমান মিন্টুর পক্ষে। প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে এই উপজেলার তিনটি পদেই বিএনপিসমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় যে নিশ্চিত, তা বলে দেওয়া যায়।

চলতি মাসের ২৭ তারিখে নির্বাচন হবে জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায়। গত নির্বাচনে চারদলীয় জোটের মধ্যে স্থানীয়ভাবে দ্বন্দ্ব থাকলেও এবার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এখানে বিএনপির উপজেলা সভাপতি ও বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম-সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাদী ব্যক্তিগতভাবে একজন ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত হলেও জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামীবিরোধী নেগেটিভ ধারণায় তিনি আছেন ঝুঁকিতে। ফলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পাশাপাশি এই উপজেলায় বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হতে পারেন।

আগামী ১৫ মার্চ নির্বাচন হবে জেলার পাইকগাছা উপজেলায়। এখানে বিএনপির পক্ষে সমর্থন পেয়েছেন সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা স ম বাবর আলী। ধর্ম, বর্ণ সব ধরনের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তার বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এ ছাড়া ২৩ মার্চ জেলার দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, তেরখাদা ও রূপসা উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এটি/এমএইচও/এমএআর/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪)