শেয়ার দরে এগিয়ে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল
রেজোয়ান আহমেদ, দ্য রিপোর্ট : আকর্ষণীয় আর্থিক অবস্থা দেখিয়ে শেয়ারবাজারে আসলেও তালিকাভুক্তির পর অনেক প্রতিষ্ঠানের আয় ও শেয়ার দাম উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। শেয়ার দাম অভিহিত মূল্যের নিচে নেমে যাওয়ার সংখ্যাও কম নয়। ফলে হরহামেশাই অভিযোগ ওঠে ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে এসব কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার সুযোগ পায়। কারণ শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আনার দায়িত্ব পালন করে ইস্যু ম্যানেজাররা।
গত ৬ বছর ধরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলোর সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করেছে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকম। তার ভিত্তিতেই পর্যালোচনা করা হয়েছে এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনা ইস্যু ম্যানেজারদের পারফরমেন্স।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৬টি কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে এনেছে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল। এরমধ্যে ৫টি বা ৮৩ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর ইস্যু মূল্যের ওপরে অবস্থান করছে। তবে কমে গেছে ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস)।
ইমপেরিয়াল ক্যাপিটালের ইস্যুকৃত ৬ কোম্পানির মধ্যে ৪টি অভিহিত মূল্যে (প্রিমিয়াম ছাড়া) ও ২টি প্রিমিয়ামসহ শেয়ারবাজারে এসেছে। এরমধ্যে তুংহাই নিটিং, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ইয়াকিন পলিমার অভিহিত মূল্যে (প্রিমিয়াম ছাড়া) শেয়ার ইস্যু করেছে। আর সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও শাশা ডেনিমস প্রিমিয়ামসহ শেয়ারবাজারে এসেছে। এই ৬ কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে ৩১৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে।
শেয়ারবাজারে আসার পরে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এএফসি এগ্রো বায়োটেকের শেয়ারের। কোম্পানিটির শেয়ারের দর বেড়েছে ৪৯২ শতাংশ। এছাড়া ইয়াকিন পলিমারের ২৫০ শতাংশ, তুং হাই নিটিং এর ২২ শতাংশ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ১৩ শতাংশ ও শাশা ডেনিমসের ০.২৯ শতাংশ শেয়া্র দর বেড়েছে। আর একমাত্র সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ৯ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
নিম্নে কোম্পানি ৬টির শেয়ার ইস্যু দর ও বর্তমান দর ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা হল :
কোম্পানি নাম |
উত্তোলন করা টাকার পরিমাণ |
তালিকা ভুক্তির সাল |
শেয়ার ইস্যু দর |
৫ অক্টোবরের শেয়ার দর |
তুং হাই নিটিং |
৩৫ কোটি |
২০১৪ |
১০ টাকা |
১২.২ |
এএফসি এগ্রো বায়োটেক |
১২ কোটি |
২০১৪ |
১০ টাকা |
৫৯.২ |
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ |
৩০ কোটি |
২০১৫ |
২০ টাকা |
২২.৬ |
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল |
৪৫ কোটি |
২০১৫ |
১০ টাকা |
৯.১ |
শাশা ডেনিমস |
১৭৫ কোটি |
২০১৫ |
৩৫ টাকা |
৩৫.৮ |
ইয়াকিন পলিমার |
২০ কোটি |
২০১৬ |
১০ টাকা |
৩৫ |
ইমপেরিয়াল ক্যাপিটালের এই ৬ কোম্পানির মধ্যে ইয়াকিন পলিমার সম্প্রতি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে। যে কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত টাকা ব্যবহার করতে পারেনি। এছাড়া তালিকাভুক্তির পরে কোম্পানির এখনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। যাতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পূর্বের সাথে পরের তুলনা করার জন্য ৫টি কোম্পানির আর্থিক হিসাব পাওয়া গেছে। এই ৫টি কোম্পানির মধ্যে ৩টি বা ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় কমেছে। বাকি ২টি বা ৪০ শতাংশ কোম্পানির ইপিএস বেড়েছে।
তালিকাভুক্তির পরে সবচেয়ে বেশি ইপিএস কমেছে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের। কোম্পানির ৫৫ শতাংশ ইপিএস কমেছে। এছাড়া সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের ২৪ শতাংশ ও তুং হাই নিটিং এর ১২ শতাংশ ইপিএস কমেছে। আর শাশা ডেনিমসের ১০০ শতাংশ ও এএফসি এগ্রো বায়োটেকের ৬৫ শতাংশ ইপিএস বেড়েছে।
নিম্নে ছকের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর শেয়ারবাজারে আসার সময়ের ও সর্বশেষ প্রকাশিত ইপিএস তুলে ধরা হল-
কোম্পানি নাম |
তালিকা ভুক্তির সাল |
আইপিওকালীন-ইপিএস |
সর্বশেষ ইপিএস |
তুং হাই নিটিং |
২০১৪ |
১.৩৯ (১ বছর) |
১.২৩ (২০১৪) |
এএফসি এগ্রো বায়োটেক |
২০১৪ |
১.০১ (৬ মাস) |
১.৫৫ (জানুয়ারি-জুন ২০১৫) |
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ |
২০১৫ |
৩.৩৬ (১ বছর) |
২.৫৪ (২০১৬) |
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল |
২০১৫ |
১.৭৮ (৬ মাস) |
০.৮০ (জুলাই-ডিসেম্বর ১৫) |
শাশা ডেনিমস |
২০১৫ |
৩.৭৩ (১ বছর) |
৭.৪৭ (২০১৬) |
ইয়াকিন পলিমার |
২০১৬ |
১.০২ (৯ মাস) |
এ বিষয়ে ইমপেরিয়াল ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সালাউদ্দিন শিকদার (এফসিএমএ) বলেন, প্রফেশনাল টিম দিয়ে ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করি। এক্ষেত্রে যেকোন কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনার আগে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নেই। এছাড়া যোগ্যতা অনুযায়ী কোম্পানির শেয়ার দর নির্ধারণ করি। যার ফলে শেয়ারবাজারে আসার পরে কোন কোম্পানির শেয়ার দর ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে আসার খুব একটা সুযোগ থাকে না।
এ সময় তিনি বলেন, একটি কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসার পরে ১-২ বছর ইপিএস কিছুটা কম হতে পারে। তবে কোম্পানির মুনাফার পরিমাণ বেড়েছে কি না তা বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
(দ্যরিপোর্ট/আরএ/এনআই/অক্টোবর ১৭, ২০১৬)