মুহম্মদ আকবর, দ্য রিপোর্ট : ঢাকার অদূরে দক্ষিণ খান থানার ফায়েদাবাদ এলাকা। আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পূর্ব দিকে হেঁটে রেললাইন পেরিয়ে গেলে ডানেবামে চোখ জোড়ানোর মতো কিছু দেখা মিলবে না। পাওয়া যাবে সদ্য গড়ে ওঠা একটি মসজিদ। যা স্থাপনাশিল্পের বিশেষত্ব বিচারে এলাকার সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। এটির স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। যিনি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভের নকশাটিও করেছেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এত মসজিদ থাকা সত্ত্বেও এই মসজিদটির প্রসঙ্গ আসার কারণ এটির নকশা ইতোমধ্যে সবাইকে আকৃষ্ট করেছে। পেয়েছেন আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার। এবারই প্রথম কোন বাংলাদেশি এ সম্মাননা পেয়েছেন। তিনি ছাড়াও গাইবান্ধায় ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার স্থাপত্যের জন্য কাসেফ মাহবুব চৌধুরীও এ পুরস্কার পেয়েছেন।

আলোচিত এই স্থাপনাটি দেখার জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়েছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। তার সঙ্গী হয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট, ফরাসি রাষ্ট্রদূত সোফি আবের, ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ওয়ানজা ক্যাম্পোস নবরেগা এবং মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নূর আশিকিন বিনতে মোহ্ তাইব। মসজিদ পরিদর্শনকালে সংস্কৃতিমন্ত্রী জানালেন, এ ধরনের স্থাপত্য বিরল। দারুণ লাগছে এখানে এসে। সারাবিশ্ব যখন জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আন্দোলন করছে, তখন এ ধরনের পরিবেশবান্ধব স্থাপত্য সত্যিই প্রশংসনীয়। মসজিদ ঘুরতে ঘুরতেই মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেন, স্থাপত্যকৌশলে এটি সত্যি দারুণ একটি স্থাপত্য। এমন সুন্দর স্থাপত্য খুব একটা দেখা যায় না।

মসজিদের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম মসজিদটির বিশেষত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘মসজিদটির নকশা করা হয়েছে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রচলতি মসজিদগুলো থেকে আলাদাভাবে। পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের দিকটি মাথায় রেখে এর নকশা করা হয়েছে। ইতিহাস, সংস্কৃতিকেও মাথায় রাখা হয়েছে। নকশায় সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীরও কিছুটা প্রভাব রয়েছে। সে সঙ্গে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে স্থানীয় ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে ও অর্থায়নে। সব নির্মাণ সামগ্রীও স্থানীয়।’ তিনি জানান, মসজিদের পূর্ণাঙ্গতার জন্য ইমামের ঘর ও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। পুরস্কারপ্রাপ্তির অনূভুতিকে গর্বের বলে তিনি জানালেন। একজন স্থপতি হিসেবে আর ভালো কাজ করতে প্রেরণা যোগাবে এ পুরস্কার।

মসজিদটির ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় বাতাসের চলাচলব্যবস্থা ও আলোর চমৎকার বিচ্ছুরণ পুরো পরিবেশের মধ্যেই ছিল অন্যরকম আধ্যাত্মিকতা। ৭৫৪ বর্গমিটারের মসজিদটির বিশেষত্ব হলো, এখানকার মসজিদের পরিচিত চিত্র মিনার নেই। চারপাশে আটটি পিলারের ওপর মসজিদটির ভিত্তি। নকশার আরেকটি বিশেষত্ব হলো, কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম।

মসজিদে নামাজ পড়াটা বেশ আরামদায়ক বলে জানালেন সেখানে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসা আজিজ উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘এখানে নামাজ পড়ার সবচেয়ে ভালো দিক এখানে গরম লাগে না। আলো-বাতাস প্রবেশের স্থান রেখে এটির ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে বিদ্যুতবিভ্রাটের সময়েও এখানে সামাজ পড়তে সমস্যা হয় না। এছাড়া প্রতি ওয়াক্তের নামাজের সময় বাইরে থেকে ভিন্ন রকমের আলো আসে।’

মসজিদের ইমাম দ্বীন ইসলাম জানান, এই মসজিদে প্রতি জামাতে ৪০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন, গেল ঈদুল আযহায় এখানে ৬ শতাধিক মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়েছিলেন।

মেরিনা তাবাসসুম ২০০৪ সালে প্যাভিলিয়ন অ্যাপার্টমেন্টে আগা খান পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতক ২০১৫ সাল থেকে নিজস্ব স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস (এমটিএ) পরিচালনা করছেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এপি/এনআই/অক্টোবর ২০, ২০১৬)