আবারও উর্দুর দাবি নিয়ে নাজিমুদ্দিন
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক পরিবেশ তখন এক ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী এই অঞ্চলের জনদাবিকে কোনো ছাড় দিচ্ছিল না। অন্যদিকে বাংলার সংগ্রামী জনগণ তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে ছিলেন অনড়।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি দ্য বেসিক প্রিন্সিপালস কমিটি অব দ্য কনস্টিটিউশন অ্যাসেম্বলি অব পাকিস্তান আবারও উর্দুকেই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অ্যাসেম্বলিতে চূড়ান্ত নির্দেশনা প্রদান করে। একই সময় ঢাকায় সফর করছিলেন তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন। পরদিন নাজিমুদ্দিন পল্টন ময়দানের সমাবেশে ঘোষণা করেন একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করিতে যাইতেছি।… প্রাদেশিক ভাষা কী হইবে তাহা প্রদেশবাসীই ঠিক করিবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে উর্দু।’
আশ্চর্যের বিষয় হল, খাজা নাজিমুদ্দিন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে এই ধরনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল- তা যেন ভুলেই গেছেন। কিন্তু ততদিনে আপাত রাজনীতিনিরপেক্ষ ছাত্ররাও রাষ্ট্রভাষার দাবিতে অনেক বেশি সচেতন হয়ে ওঠেছেন। ফলে তার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। শ্লোগান ওঠে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। ওইদিন পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় একটি প্রতিবাদ সভা ও মিছিল আয়োজন করে।
নাজিমুদ্দিনের ঘোষণার প্রতিবাদে ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করে। এই সমাবেশ থেকে নাজিমুদ্দিনের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা ছাড়াও পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদকে পশ্চিম পাকিস্তানের হাতের পুতুল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
৩০ জানুয়ারি ভাষা আন্দোলনকে নতুন মাত্রা লাভ করে। এ দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ও পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষায়তনে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্ররা বিভিন্ন এলাকায় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে। ওইদিন মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভাসানীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি আওয়ামী মুসলিম লীগের সরাসরি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
৩১ জানুয়ারি ভাসানীর সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে তিনি সরকারবিরোধী সব দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। এতে আহ্বায়ক ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব। সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে খিলাফত-ই-রব্বানী, তমুদ্দিন মজলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ। নবগঠিত ৪০ সদস্যের ওই সংগ্রাম পরিষদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪)