দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : হঠাৎ করে দায়িত্ব পাওয়ায় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নিতে চাপ হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এ পরীক্ষা নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা নেই, অন্যান্যবারের মতো এবারও ঠিক সময়ে পরীক্ষা হবে।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর সচিবালয়ে রবিবার (অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানান।

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা আগামী ১ নভেম্বর শুরু হবে। এ দু’টি পরীক্ষায় এবার মোট শিক্ষার্থী ২৪ লাখ ১০ হাজার ১৫ জন বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শেষ করে এনেছিল মন্ত্রণালয়টি। কিন্তু মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে এ উদ্যোগ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় জানিয়ে এ প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে পুরো অবস্থার বিবরণসহ জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার দায়িত্ব ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, আমাদের অভিভাবক সবাই যারা সম্পৃক্ত আছেন, সকলের উদ্দেশে বলছি, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নিয়ে আপনারা কোন ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে, অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবেন না। কিংবা আপনারা কোনভাবেই কোন সন্দেহ রাখবেন না যে, এটা ঠিকভাবে হবে কি হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যান্যবারের মতো ঠিক সময়মতো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণ করবো এবং ফলাফল দেবো। এবার ১ নভেম্বর পরীক্ষা শুরু হবে, পরীক্ষা শেষ হবে ১৭ নভেম্বর। ৩০ দিনের মধ্যে আমরা ফলাফল দেই।’

‘আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি আমাদের সব শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদেরকে অন্যবার যে নিয়মে হয়েছে, সেই নিয়মেই সবকিছু হবে। কোন ব্যত্যয় হবে না।’

শিক্ষানীতি অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী বা জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেওয়ার কথা জানিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘সে হিসেবে আমরা বলেছি, যেহেতু প্রথম তাই সব ধরণের সহযোগিতা আমরা দিয়ে যাব। শিক্ষাবোর্ডগুলো পরীক্ষার আয়োজন করবে। এ ব্যাপারে যে সাহায্য লাগে সেটা করতে প্রথম থেকেই আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সে সাহায্যই করছিলাম। গত ২০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর চিঠি পেলাম। লিখেছেন তাদের পক্ষে এখন জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।’

‘খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে পাওয়ার ফলে আমরাও কিছুটা অপ্রস্তুত এ ধরণের একটি প্রস্তাবের কারণে। আজ থেকে ধরলে পরীক্ষার আর ১০ দিন বাকি আছে’ বলেন মন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘দায়িত্ব আমরা নিয়েছি। এটা আমাদের দায়িত্ব, কারণ পরীক্ষাটা অব্যাহত রাখতে হবে। মাঝখানে একটা বিচ্ছিন্নতা হলে আমাদের ধারাবাহিকতায় ক্ষতি হবে। আমরা একই শিক্ষা পরিবার, দুটিই সরকারের মন্ত্রণালয়। কাজগুলো যখন যে যা পারে করার দায়িত্ব নিতে দ্বিধাবোধ করার কোন কারণ নেই। যদিও আমাদের খুব চাপ পড়বে, রাত দিন খেটেই এটা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বন্ধ (শুক্র ও শনিবার) থাকলেও আমরা কিছুটা যোগাযোগ করে ফেলেছি। বোর্ডগুলোকে প্রস্তুত করেছি। আমাদের মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’

‘তারা (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) আমাদের উপর আস্থা রেখেই বলেছেন আমরা যেন করে ফেলি (পরীক্ষা নেওয়া)। আমরা তাদের আস্থার অবশ্যই মর্যাদা রাখব। পরীক্ষা আমরা আগের মতোই করব।’

মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ লিখেছেন আমি ক্ষুব্ধ। আমি কোথাও এ কথাটা বলিনি। বরং তারা আমাদের উপর আস্থা রাখায় আমরা খুশি হয়েছি। এটা ঠিক যে আমাদের উপর চাপ বেশি পড়বে।’

গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন পরীক্ষা নিতে পারবে না তা তিনি জানেন না দাবি করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়নি। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।’

জেএসসি-জেডিসিতে পরীক্ষার্থী ২৪ লাখ ১০ হাজার

এ বছর জেএসসি ও জেডিসিতে মোট পরীক্ষার্থী ২৪ লাখ ১০ হাজার ১৫ জন। এরমধ্যে ছাত্র ১১ লাখ ২৩ হাজার ১৬২ জন ও ছাত্রী ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৮৫৩ জন। ছাত্র থেকে ছাত্রী বেশি এক লাখ ৬৩ হাজার ৬৯১ জন বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

২৮ হাজার ৮৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার্থীরা ২ হাজার ৭৩৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবে।

আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জেএসসিতে ২০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৩ ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৭২ জন পরীক্ষা দেবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীদের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যেন কোনভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা না করেন। আমাদের মনিটরিং অব্যাহত আছে। সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সচেতন আছে, সক্রিয় আছে। কেউ মিথ্যা অপপ্রচার করে আমাদের ছেলেমেয়েদের বিভ্রান্ত করবেন না।’

পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধ রাখা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ফেসবুক বন্ধ করা বড় জটিল ব্যাপার। ফেসবুক বন্ধ হবে না। তবে ফেসবুকের উপর বিশেষ নজর রাখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিব মো. সোহবার হোসাইন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এমকে/অক্টোবর ২৩, ২০১৬)