এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি : আট বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিল নূরুল ইসলাম। তখন তার বয়স ছিল ৭ বছর। সেই নূরুলকে অবশেষে ফিরে পেয়েছে তার পরিবার। সেদিনের সেই শিশুটি এখন ১৫ বছরে কিশোর। নূরুলকে ফিরে পেয়ে তার পরিবার যেমন খুশি, তেমনি খুশি প্রতিবেশীরাও।

খাগড়াছড়ি পুলিশের সহায়তায় অবশেষে ৮ বছর পর হারিয়ে যাওয়া নূরুল ইসলামকে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার।

পাচারচক্রের কবলে পড়েছিল শিশু নূরুল ইসলাম। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে তার সর্বশেষ আশ্রয় হয়েছিল ভারতের দিল্লির একটি এনজিওতে। এ নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল।

নূরুল ইসলামের বাবা খাগড়াছড়ি শহরের শালবনের বাসিন্দা সরফত আলী। তিনি জানান, নূরুল তার বড় ছেলে। আট বছর আগে সে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর ব্যর্থ হয়ে তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবারের সদষ্যরা। তারা ধরেই নিয়েছিল নূরুল ইসলাম হয়তো মারা গেছে। অবশেষে ৮ বছর পর তাকে আবার কাছে পেয়েছে তারা।

শনিবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে নূরুল খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পৌঁছালে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরিবারের সদস্যরা নূরুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

নূরুল ইসলামের মা ফাতেমা বেগম পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে অতীতের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেছি’।

নূরুল ইসলাম জানায়, ৮ বছর আগে জাহাঙ্গীর নামে এক যুবক তাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বরিশাল নিয়ে যায়। পরে সে পালিয়ে ঢাকায় গেলে আরও এক যুবক তাকে আবারও প্রলোভন দেখিয়ে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতের শিলছড়িতে পাচার করে দেয়। সেখানে নূরুল এক চায়ের দোকানে কাজ পায়। কিন্তু ঠিক মতো খাবার না দেওয়ায় সেখান থেকে আরও এক শিশুসহ সে দিল্লি পালিয়ে যায়। সেখানে সে বিভিন্ন চায়ের দোকানে কাজ করে। একদিন রাতে নূরুল ফুটপাতে ঘুমিয়ে পড়লে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং ‘বাচপান বাঁচাও আন্দোলন’ নামে একটি এনজিওর কর্মীদের হাতে তুলে দেয়।

নূরুল জানায়, সে কখনো ভাবেনি যে দেশে ফিরতে পারবে।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী নিখোঁজ নূরুল ইসলামকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারায় আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি বিষয়টিকে বাংলাদেশ পুলিশবাহিনীর সাফল্য ও গর্ব হিসেবেই দেখছেন। তিনি জানান, মাস তিনেক আগে ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত এনজিও বাচপান বাঁচাও আন্দোলন-এক কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে হারিয়ে যাওয়া নূরুল ইসলামের পরিবারকে খুঁজে বের করে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রয়োজনী কাগজপত্র পাঠানো হয়। অবশেষে গত শুক্রবার রাতে বেনাপোল হয়ে নূরুল ইসলাম দেশে ফিরে আসে।

(দ্য রিপোর্ট/এম/জেডটি/এনআই/অক্টোবর ২৩, ২০১৬)