গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় একসঙ্গে জন্ম নেওয়া তিন শিশুর মধ্যে দুই শিশু মারা গেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে তাদের মৃত্যু ঘটে। অপর শিশু সন্তানটিকে বাঁচানো যাবে কি না-তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাবা-মা।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাতে এক শিশুর ও মঙ্গলবার ভোরে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে তিন ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ভরতখালি ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় গ্রামের আকাশ মিয়ার স্ত্রী পাপিয়া বেগম। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে ওজন কম হওয়ায় শিশুদের বেঁচে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অর্থের অভাবে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে না পারায় দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

বেঁচে থাকা অপর সন্তান নিয়ে সাঘাটা উপজেলার ঝড়াবর্ষা গ্রামে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন পাপিয়া। দু’টি সন্তান মারা যাওয়ায় বেঁচে থাকা সন্তানটিকে নিয়েও নানা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তিনি।

স্থানীয় ও পাপিয়ার পারিবার সূত্রে জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঝড়াবর্ষা গ্রামের আবদুল কাফি মিয়ার মেয়ে পাপিয়ার সঙ্গে দেড় বছর আগে আকাশ মিয়ার বিয়ে হয়। আকাশ ঢাকায় রিকশাভ্যান মেরামতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিয়ের পর পাপিয়া বেগম আকাশের বাড়িতে থাকতো। পাপিয়া অন্তঃসত্ত্বা হলে কয়েক দিন আগে বাবার বাড়িতে যান। শনিবার (২২ অক্টোবর) সকালে হঠাৎ করে পাপিয়া বেগমের প্রসববেদনা উঠলে পরিবারের লোকজন দ্রুত তাকে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে দুপুরে পাপিয়া স্বাভাবিকভাবে তিনটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় শিশুদের ওজন কম ছিল।

নবজাতকের বাবা আকাশ মিয়া বলেন, ‘হাসপাতালে জন্ম হওয়া তিন ছেলে সন্তানের ওজন কম থাকায় বিকেলে চিকিৎসক তাদের গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। কিন্তু সেখান থেকে তাদের রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তিন সন্তানকে বাঁচাতে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তিন সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে রবিবার বিকেলে ঝড়াবর্ষা গ্রামে পাপিয়ার বাবার বাড়িতে চলে আসেন’।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমবারের মতো একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম নেওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু অর্থ না থাকায় তাদের ঢাকায় নিয়ে যেতে পারি নাই। চিকিৎসার অভাবে দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। এখন বেঁচে থাকা ছেলেটিকে বাঁচাতে পারবো কি না আল্লাহ ভালো জানেন। ঢাকায় যা আয় করি তা দিয়ে সংসারই চলে না। ছেলেকে বাঁচাতে ও উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি সহায়তা ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।’

মা পাপিয়া বেগম বলেন, ‘চেয়েছিলাম একটি সন্তান। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তিনটি সন্তান দিয়েছিলেন। উন্নত চিকিৎসা না করায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন সবার কাছে দোয়া চাই যেন আল্লাহ এক ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখেন।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধার সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নবজাতক দু’জনের ওজন এক কেজি করে এবং অপর নবজাতকের ওজন ৭০০ গ্রাম ছিল। ওজন কম থাকায় তারা ঝুঁকিতে ছিল। উন্নত চিকিৎসার অভাবে দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবার চাইলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে বেঁচে থাকা শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

(দ্য রিপোর্ট/এআরই/এমকে/এনআই/অক্টোবর ২৫, ২০১৬)