কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট :ইরাক ফেরত শ্রমিক ও ইরাকে আটকে থাকা স্বজনদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ডেকে নিয়ে ধমকিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রবিবার বেলা ১২টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি থেকে মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে ইরাক ফেরত শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে কর্মকর্তারা ধমক দেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মহসিন উদ্দিন চৌধুরীসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের নামে অবস্থান ধর্মঘট পালনকারীদের ধমকানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইরাক ফেরত শ্রমিক অভিযোগ করেন। বর্তমানে তারা প্রবাসী কল্যাণ ভবনের নিচে অবস্থান করছেন।

রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনের পঞ্চমতলায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের দফতরের সামনে বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ইরাক ফেরত ১১ শ্রমিক এবং ইরাকের একটি কোম্পানির তাবুতে বন্দি ১৬ শ্রমিকের স্বজনরা। ১১ মাস ধরে ইরাকে আটক ১৬জন বাংলাদেশি শ্রমিককে দেশে ফেরত আনা, দোষী রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং ফেরত ১১জনের ৮ মাসের বেতন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তারা।

অনশনরত ইরাক ফেরত টাঙ্গাইলের মো. মাসুদ জানায়, ‘আমাদের অবস্থান কর্মসূচি থেকে ডেকে নিয়ে যে দালালদের টাকা পয়সা দিয়েছি তার ডকুমেন্ট দিতে বলেন কর্মকর্তারা। আমরা তো আর সব ডকুমেন্ট দিতে পারব না। তাছাড়া মন্ত্রী সাহেব তো প্রায় এক মাস আগেই আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ৪দিনের মধ্যে ইরাকে বন্দি ১৬ শ্রমিককে ফেরত আনবেন। কিন্তু এক মাস চলে গেলেও মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলে এক কর্মকর্তা আমাদের বলেন, তোমরা কি আমাদের ঘাড়ে ধরে কাজ করাতে চাও? তোমাদের অভিযোগ নিয়ে আমরা কাজ করছি। অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা করছি। ডকুমেন্ট না থাকলে তোমাদের কীভাবে টাকা আদায় করে দেবো।

শাওন আলী নামের এক ইরাক ফেরত শ্রমিক অভিযোগ করেন, আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের(ইঞ্জিনিয়া্র খন্দকার মোশাররফ হোসেন)সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও দেখা করতে দেয়নি। বরং নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে তারা আমাদের পঞ্চমতলা থেকে জোর করে নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘উপ-সচিবের নেতৃত্বে ৪-৫জন কর্মকর্তা অবস্থানরতদের নিয়ে মিটিং করেছেন। তারা আমাদের সমাধানের কথা বলার চেয়ে ধমকিয়েছেনই বেশি। কেন আমরা দালালদের টাকা দিলাম, কেন বাছবিচার না করে বিদেশে গেলাম, এ নিয়ে জেরা করেছেন।

ভূক্তভোগীরা বলেন, আমরা বলেছি শাহজালাল এয়ারপোর্টে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, বিএমইটি থেকে স্মার্ট কার্ড দিয়েছে, ইমিগ্রেশনও ইরাকে যেতে বাধা দেয়নি। তাহলে আমরা বুঝবো কেমনে যে আমাদের ভিসা জাল?

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. মহসিন উদ্দিন চৌধুরী দ্য রিপোর্টের কাছে দাবি করেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কোনো অবস্থান কর্মসূচি হচ্ছে না। সোমবার ১৩জন শ্রমিক ইরাক থেকে ফেরত আসছে’ বলেই লাইন কেটে দেন তিনি।

রবিবার বিকেল ৪টার দিকে অবস্থান কর্মসূচি পালনরত ইরাক ফেরত মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পঞ্চমতলা থেকে আমাদের নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন এখানেই(ভবনের নিচে) অবস্থান করছি। মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা দেখা করতে চাইলেও আমাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তারা(কর্মকর্তারা) বলছেন, বন্দি শ্রমিকদের ফেরত আনা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত না হবো যে তারা বিমানে উঠেছে, ততক্ষণ আমরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়েই যাব।’

২০১৩ সালে ৪টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ইরাকে যান ২৭জন বাংলাদেশি। যাওয়ার পর জানতে পারেন তাদের ভিসা জাল। এরপর বাংলাদেশি দালালদের পূর্ব নির্ধারিত একটি ইরাকি কোম্পানির মালিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ৮মাস নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে ১১ শ্রমিককে ফেরত আনা হয়। বাকি ১৬জন সেখানেই রয়ে যান। এদের মধ্যে দুইজন পালিয়েছেন বলে জানা যায়।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪)