সুবিধাভোগীরা রওশনের, বঞ্চিতরা এরশাদের!
জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমপি ও সুবিধাভোগীরা যোগ দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা নেতা ও সরকারের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিতরা ভিড় করছেন এরশাদের কাছে।
এরশাদ ও রওশন ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এরশাদ নানাভাবে দলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলেও রওশনপন্থীদের ওপর সরকারের আশীর্বাদ থাকায় তা পারছেন না। দিন যতই যাচ্ছে, দলের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন এরশাদ।
আর দলে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই বুধবার এরশাদ বলেছেন, ‘যারা বন্ধন ছিন্ন করতে চায় তাদের বলছি, ফিরে এসো আমার কাছে। তা না হলে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।’
এ বিষয়ে বুধবার বর্ধিত সভায় না যাওয়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের সাবেক মুখপাত্র কাজী ফিরোজ রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা তো ঘরেই আছি। আমি গোপালগঞ্জ থাকার কারণে বর্ধিত সভায় যাইনি।’
আর শনিবার বিরোধী দলে থেকেও মন্ত্রিত্ব নেওয়া নেতাদের সম্পর্কে এরশাদ বলেন, ‘মন্ত্রিত্ব না নিলেই ভালো হতো।’
এরশাদ আরো বলেন, ‘আমি যেখানে আছি, সেখানে জাতীয় পার্টি থাকবে। আমি না থাকলে পার্টি থাকার কোনো প্রশ্ন নেই। সামান্য মোহ বা পদের কারণে এই বন্ধন ছিন্ন করা যাবে না।’
জাপা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সংসদে জাপার ৩৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে মাত্র তিনজন এরশাদের সঙ্গে আছেন। বাকি ৩০ জন এরশাদের সঙ্গে ন্যূনতম যোগাযোগও রক্ষা করছেন না। যোগাযোগ না করার দলে এরশাদের এক সময়কার ঘনিষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, কিশোরগঞ্জের মুজিবুল হক চুন্নু, চট্টগ্রামের আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলুও রয়েছেন। এরা এখন সরকার ও রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।
এদের মধ্যে আবার সরকারের মন্ত্রিত্ব নিয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙা।
এ ছাড়া নীলফামারীর শওকত চৌধুরী, কুড়িগ্রামের একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, একেএম মাইদুল ইসলাম, বগুড়ার শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার, নুরুল ইসলাম ওমর, অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী, জামালপুরের ইঞ্জিনিয়ার মামুনুর রশিদ, ময়মনসিংহের সালাউদ্দিন মুক্তি, এমএ হান্নান, ফখরুল ইমাম, নারায়ণগঞ্জের নাসিম ওসমান, লিয়াকত হোসেন খোকা, সুনামগঞ্জের পীর ফজলুর রহমান, সিলেটের সেলিম উদ্দিন, ইয়াহিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জের মুনিম চৌধুরী বাবু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জিয়াউল হক মৃধা, কুমিল্লার আমির হোসেন, নুরুল ইসলাম মিলন, লক্ষ্মীপুরের মো. নোমান, কক্সবাজারের হাজী ইলিয়াস রওশনকে অনুসরণ করছেন।
অন্যদিকে, জাপার মহাসচিব পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, তার স্ত্রী বরিশাল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না ও ঢাকার সালমা ইসলাম শুধুমাত্র এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
জানা যায়, এ আক্ষেপ থেকেই বুধবার উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ প্রশ্ন করেছিলেন, ‘চেয়ারম্যানের নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে গিয়েছিল, তারা কি আমাদের প্রিয়পাত্র? তারা কি জাতীয় পার্টিতে থাকবে?’ জবাবে নেতাকর্মীরা ‘দালালেরা হুঁশিয়ার, সাবধান’ বলে স্লোগান দেন।
তখন এরশাদ বলেন, ‘এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। নির্দেশ উপেক্ষাকারীরা দেখবে, পার্টি কীভাবে এগিয়ে চলে। জাতীয় পার্টি ৩০ জন সাংসদের দল নয়, লাখো-কোটি মানুষের দল।’
এ বিষয়ে রওশন ঘনিষ্ঠ কাজী ফিরোজ রশিদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কিছু লোক স্যারকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। স্যারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন। জাতীয় পার্টিতে কোনো ভেদাভেদ নেই। কিছুদিন পরই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, দলের ঐক্যের প্রশ্নে আমাদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ থাকা চলবে না। আমরা সবাই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তবে অন্য কেউ কিছু করার চেষ্টা করলে তা ফলপ্রসূ হবে না।
বুধবার জাপার বর্ধিত সভায় তিনি বলেন, যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। জাতীয় পার্টির কর্মীরা তাদের ক্ষমা করবে না।
(দ্য রিপোর্ট/সাআ/এইচএসএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৪)