জয়পুরহাটে বিপাকে বিএনপি, উজ্জীবিত আ’লীগ
জয়পুরহাট প্রতিনিধি : উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় জয়পুরহাট জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে জয়পুরহাট সদর, ক্ষেতলাল ও কালাই উপজেলা পরিষদেরর নির্বাচন ২৭ ফেব্রুয়ারি। তৃতীয় দফায় ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে আক্কেলপুর উপজেলার নির্বাচন। জেলায় ৩টি উপজেলায় ইতোমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হওয়ায় জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।
জেলার ৪টি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই একক প্রার্থী সমর্থন দিয়েছে। সে অনুয়ায়ী ৪টি উপজেলার আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীরা হলেন- জয়পুরহাট সদরে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি আব্বাস আলী মণ্ডলের ছেলে আরিফুর রহমান রকেট (মোটরসাইকেল), ক্ষেতলালে বর্তমান চেয়ারমান তাইফুল ইসলাম তালুকদার (আনারস) ও কালাইয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন (মোটরসাইকেল)। আক্কেলপুরে দলের একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর। আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী হওয়ায় এসব প্রার্থীরা রয়েছেন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে।
অপরদিকে, সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থানে বিএনপি-জামায়াত জোট। জয়পুরহাট সদরের সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান (আনারস) ও আক্কেলপুর উপজেলায় সাবেক পৌর মেয়র বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কমলকে বিএনপি-জামায়াত জোট একক প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপির তিন সদস্যের জেলা কমিটি প্রার্থী নির্ধারণে কিছুতেই ঐকমত্যে না আসায় ক্ষেতলাল ও কালাইয়ে একাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। এর সঙ্গে কালাইয়ে যোগ হয়েছে জামায়াতের প্রার্থী। গত ৫ বছরে জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান আক্কেলপুরে সাবেক পৌর মেয়র বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কমল ও ক্ষেতলাল থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি রওনকুল ইসলাম টিপু চৌধুরীকে (দোয়াত-কলম) সক্রিয় সমর্থন দিয়ে এসেছেন।
বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত এমপিরা নিজ নিজ এলাকার কমিটি গঠন করবেন- এমন নির্দেশনা থাকলেও জেলার কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুরে দুই এমপির আলাদা কমিটি ছিল। এ বিরোধ নিয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি গোলাম মোস্তফা সমর্থকদের সঙ্গে সভাপতি মোজাহার আলী সমর্থকদের হামলা-মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এ দুজন মোজাহারপন্থী হওয়ায় নিজ নিজ উপজেলা কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা স্থান না দিলেও জনমত যাচাইয়ের ভিত্তিতে এবং দলীয় কোন্দল মেটাতে এবং নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীকে জয়ী করার অঙ্গীকার নিয়ে ওই দুজনকেই উপজেলা চেয়ারম্যান পদে সমর্থন দিয়েছেন তিনি। সেক্ষেত্রে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকটা উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে মোজাহার আলী প্রধান আক্কেলপুরে কমলকে মেনে নিলেও ক্ষেতলালে তার সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও টিপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুবদল নেতা খালেদুন মাসুদ আঞ্জুমানকে (মোটরসাইকেল) ও কালাই উপজেলায় বিএনপির আনিছুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন ফকিরকে (ঘোড়া মার্কা) প্রার্থী করায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। কালাই উপজেলায় আনিছুর রহমান তালুকদারের (দোয়াত-কলম) পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। ১০ ফেব্রুয়ারি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি হারুনুর রশীদ জয়পুরহাটে ৪টি উপজেলার চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে জানানো হয়েছে, জয়পুরহাট সদর উপজেলায় মো. ফজলুর রহমান, আক্কেলপুর উপজেলায় কামরুজ্জামান কমল, ক্ষেতলাল উপজেলায় রওনকুল ইসলাম চৌধুরী টিপু, কালাইয়ে মো. আনিছুর রহমান তালুকদার। কিন্তু এই চিঠিকে আমলেই নেননি জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান। তিনি বলেন, হারুনুর রশীদ এমন চিঠি দিতে পারেন না। এ এখতিয়ার তার নেই।
এ ব্যাপারে সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তাফা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদের নিদের্শনা মোতাবেক ও তার নির্বাচনী এলাকায় জনমতের প্রতিফলন হিসেবে আক্কেলপুর উপজেলায় কামরুজ্জামান কমল, ক্ষেতলাল উপজেলায় রওনকুল ইসলাম চৌধুরী টিপু, কালাইয়ে মো. আনিছুর রহমান তালুকদারকে একক প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থন দেওয়া হয়েছে, যা দলের হাইকমান্ডও অবগত আছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত এবং জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে, একাধিক প্রার্থী নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে বিএনপি-জামায়াতকর্মীরা।
(দ্য রিপোর্ট/এএএম/জেএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)