স্কুলশিক্ষক বিমল স্ট্রবেরি চাষ করে স্বাবলম্বী
এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি থেকে : খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে সফল হয়েছেন লেমুছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের দরিদ্র সহকারী শিক্ষক বিমল ব্রত চাকমা। দারিদ্র্যতাকে বিতাড়িত করে এখন সে স্বাবলম্বী। শ্রমপাগল বিমল ব্রত চাকমা ইতোমধ্যে লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
বিমল ব্রত চাকমা স্ট্রবেরি চাষ করে শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, তার সফলতা দেখে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে উদ্যোগী হচ্ছেন। ইতোমধ্যে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছেন আরো ৫ কৃষক। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এলাকার ৪০টি হতদরিদ্র পরিবারের। তবে সুষ্ঠু বাজারব্যবস্থা না থাকার কারণে বেকায়দায়ও পড়তে হচ্ছে চাষিদের।
বিমল ব্রত চাকমা শিক্ষকতার পাশাপাশি অবসর সময়ে কৃষিকাজ করতেন। স্ট্রবেরি চাষের ওপর তার কোনো পূর্বঅভিজ্ঞতা ছিল না। ২০১১ সালে একটি এনজিওতে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি স্ট্রবেরি চাষ সম্পর্কে জানতে পারেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পড়ে তিনি স্ট্রবেরি চাষে উদ্যোগী হন এবং কক্সবাজার থেকে চারা সংগ্রহ করে মাত্র ১০ শতক জমিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন। চলতি বছর চাষ করেছেন ৮০ শতক জমিতে। বিমল ব্রত চাকমার বাগানজুড়ে এখন আকর্ষণীয় টকটকে লাল বর্ণের স্ট্রবেরি। আকারেও বেশ বড়।
নানা পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ সৌখিন ও দামি ফল স্ট্রবেরি মূলত শীতপ্রধান দেশের ফসল হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়ার রবি মৌসুম সর্বত্র চাষোপযোগী একটি উচ্চফলনশীল ফসল। বিশেষ করে খাগড়াছড়ির জলবায়ু, আবাহাওয়া ও মাটি স্ট্রবেরি চাষের জন্য উপযোগী। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফল আহরণ করা যায়।
বিমল ব্রত চাকমা জানান, তার বাগানের উৎপাদিত স্ট্রবেরি এখন খাগড়াছড়ির চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামেও সরবরাহ হচ্ছে। তিনি প্রতিকেজি স্ট্রবেরি ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই স্ট্রবেরি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা করে। তিনি এ পর্যন্ত লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন এবং মৌসুমের শেষ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ টাকার বিক্রি করতে পারবেন।
খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে খাগড়াছড়ি জেলায় স্ট্রবেরি চাষ আরো বিস্তার করা সম্ভব। আর তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ আবুল কাশেম জানান, লাভজনক হওয়ায় খাগড়াছড়ির চাষিরা ক্রমেই স্ট্রবেরি চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় কৃষক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
(দ্য রিপোর্ট/এইচএমএফ/জেএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)