দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আল কায়েদার কথিত ভিডিও বার্তা নিয়ে সরকারের বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ, অসৎ ও বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সোমবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘রবিবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা প্রধান আয়মন আল জাওয়াহিরির কথিত এক ভিডিও বার্তা প্রকাশের পর সরকারি দলের নেতারা ক্রমাগত মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থী ও ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সরকারি দল ও জোটের কতিপয় ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সভা-সমাবেশ এমনকি সংসদে ক্রমাগত মিথ্যা, অযৌক্তিক, উদ্ভট এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বানোয়াট হলে অনিবার্যভাবেই তা পরস্পরবিরোধী হয় এবং বক্তব্যের মধ্যেই অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সত্য কথা বেরিয়ে আসে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার বক্তব্যে মূল উদ্দেশ্য প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চাইলে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। এটাই হলো প্রচারণা এবং বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের মূল উদ্দেশ্য। প্রার্থী, ভোটার ও ভোটবিহীন নির্বাচনী প্রহসনকে গোটা গণতান্ত্রিক বিশ্ব প্রত্যাখ্যান করায় আল কায়েদার হুমকির কথা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পক্ষে টানাই যে ক্ষমতাসীনদের মূল উদ্দেশ্য, এটা আর গোপন থাকল না।’

ভোটারবিহীন নিবার্চন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন সিনেটে আলোচনা হয়েছে। তারা অতি দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য বলেছে। সে জন্যই নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে। এটা দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান।’

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় যখন সামনে নিয়ে আসা হয়, তখন দেশকে বড় হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। এটি হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য।’

বিএনপি সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ কখনই প্রশ্রয় দেয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ দেশের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সূত্রপাত আওয়ামী শাসনামলে এবং তার রাষ্ট্রীয় বিস্তৃতি ঘটেছে এই সরকারের আমলেই। বিএনপি একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক দল হিসেবে হত্যা, গুম, সন্ত্রাস ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করেছে ও করবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের জন্য সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে ক্রমবর্ধমানভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-আলেম-ওলামাদের গুম ও হত্যাকাণ্ডের আমরা নিন্দা করি। মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল, জুলুম ও হয়রানির প্রতিবাদ করি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একদিকে দেশের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং সকলের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধিদের রাষ্ট্র পরিচালনা অর্থাৎ গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে অবিচল বিএনপিকে মিথ্যা অভিযোগে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে নির্বাচনের নামে মনোনীত ব্যক্তিদের সমর্থনে সরকার পরিচালনার পথকে বাধাহীন করার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের নামে পাশে টানার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে সরকার।’

তিনি বলেন, অবাধ তথ্যপ্রবাহ এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সরকারি প্রভাব খাটিয়ে দেশের কিছু প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে অসত্য প্রচারে বাধ্য করে দেশের জনগণকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা গেলেও বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। সরকার যত দ্রুত এই সত্য বুঝবে, ততই তা দেশের এবং তাদের নিজেদের জন্য ভালো।

আন্তর্জাতিক যে কোনো সন্ত্রাসী আগ্রাসন থেকে মাতৃভূমি বাংলাদেশকে মুক্ত রাখা দেশের সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির দায়িত্ব। এই দায়িত্ব ঐক্যবদ্ধভাবে পালন করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার পরিবর্তে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে দেশ ও জনগণকে বিভক্ত করার আত্মঘাতী ষড়যন্ত্র থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এমসি/এইচএসএম/এজেড/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)