একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি ঘোষণা
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ইসলামী রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা পুনরায় ব্যক্ত করার ফল রাতারাতি বুঝতে পারেন। তাই ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে নিজের বক্তৃতাকে হালকা করার চেষ্টা করেন কিন্তু মূল দাবি থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তিনি জিন্নাহর ঢাকা সফরকালীন বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘তিনি কায়েদে আযমের মতামত উল্লেখ করেছেন মাত্র। তিনি কায়েদের নীতিতে দৃঢ়বিশ্বাসী। তবে এ বিষয়ে গণপরিষদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ একই সঙ্গে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ বিষয়ে যারা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইবে, তারাই পাকিস্তানের দুশমন। এ যেন জিন্নাহর কথার প্রতিধ্বনি।
এদিকে মওলানা ভাসানীর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটি, যুবলীগ ও বিভিন্ন কলেজ ইউনিয়নের মতো একাধিক ছাত্র সংগঠন মাঠে নেমে পড়ে। এতে অভাবিত সাড়াও মেলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ৪ ফেব্রুয়ারির ছাত্রসভায় ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল দেশব্যাপী হরতাল, সভা, শোভাযাত্রা এবং ঢাকার আইন পরিষদ ঘেরাও। উদ্দেশ আইন পরিষদের প্রথম দিনের অধিবেশনেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের জন্য প্রস্তাব পাস করানো। এটা ছিল ২১ ফেব্রুয়ারিকে বেছে নেওয়ার তাৎপর্য।
৪ ফেব্রুয়ারির সভা শেষে ১০-১২ হাজার ছাত্রছাত্রীর বিশাল মিছিল রাজপথ ঘুরে মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনের বাসভবন বর্ধমান হাউসের সামনে জড়ো হয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান তোলে। এ স্লোগানের উল্লেখযোগ্য হলো- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ ও ‘ভাষা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলবে না’। এ মিছিলে কিছুসংখ্যক সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। ছাত্রসভার এ সিদ্ধান্ত সমর্থন করে এই দিনই সর্বদলীয় পরিষদের সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং মওলানা ভাসানী ওই কর্মসূচি সফল করে তোলার জন্য দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানান।
মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ৬ ফেব্রুয়ারি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আন্দোলনের প্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহের জন্য ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পতাকা দিবস পালন করা হবে। তবে সভার সবচেয়ে জরুরি ঘোষণা ছিল সম্ভাব্য ১৪৪ ধারা জারি হলে কর্মসূচি কী হবে। অলি আহাদের মতে, সেদিন বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্য আইন অমান্য করার বিরুদ্ধে মত দেন। কিন্তু অলি আহাদ ও বৈঠকের সভাপতি মওলানা ভাসানী অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করার পক্ষে জোরেশোরে কথা বলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
এদিকে একুশে ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি সফল করার জন্য ঢাকার বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মতৎপরতা শুরুর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা চলে। চারদিক থেকে সেদিনের কর্মসূচির পক্ষে ব্যাপক সাড়া মেলে।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/এএইচ/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)