বিডিআর বিদ্রোহের রায়
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ মামলার রায় মঙ্গলবার ঘোষিত হয়েছে। ঢাকা মহানগর তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের এই রায় ঘোষণার মধ্যদিয়ে ওই সময় দেশব্যাপী গড়ে ওঠা কথিত বিডিআর বিদ্রোহের বিচারকাজের এই পর্বের সমাপ্তি হলো। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটভূক্ত ৮৪৬ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্যরা পেয়েছেন বেকসুর খালাস।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরে যে বিদ্রোহ হয় তাতে বিডিআর-এ কর্মরত ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন মারা যান। নারকীয় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় বিডিআরের বার্ষিক প্যারেড ও দরবারের সময়। যে কারণে বিডিআর-এ দায়িত্বরত সেনাকর্মকর্তারা ওই দিন সারাদেশ থেকে পিলখানায় হাজির ছিলেন। চক্রান্তকারীরা এই সময়টাকেই বেছে নেয় এবং আপাতদৃষ্টিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করে বিডিআর জোয়ানদেরই।
সারাদেশে এটিকে বিডিআর বিদ্রোহ বলা হলেও একদল নিরস্ত্র সেনাকর্মকর্তাকে একযোগে এভাবে খুন শুধু বিদ্রোহ বলে মেনে নেয়নি দেশবাসী। তখনই অভিযোগ উঠেছিলো এই হত্যাকাণ্ডে বিদেশি মদদের। রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে আইএসআইয়ের সংযোগ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। কোনো কোনো সামারিক বিশেষজ্ঞ বিদেশি কানেকশনের কথা বলেছেন। তবে যেহেতু বিচার পর্বে সরকারপক্ষ বা অন্য কেউ বিদেশি কানেকশনের বিষয়টি আনেনি, সেই কারণে আপাতত এই বিষয়ে কথা না বলাই শ্রেয়।
যতদূর জানা যায়, একটি মাত্র মামলায় এতো অধিক সংখ্যক মানুষের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবনের নজির দেশে বা দুনিয়ার কোথাও নেই। সে কারণে, রায় যা-ই হোক না কেন দেশে বা বিদেশে এই রায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। চলমান রাজনীতিতে এই রায়ের প্রভাব পড়াও খুবই স্বাভাবিক।
আমরা মনে করি, একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে সরকার যদি পুরো বিষয়টি জাতির সামনে খোলসা করতো, তাহলে এ নিয়ে পানি ঘোলা করার সুযোগ থাকতো না। আইন প্রতিমন্ত্রী রায়ের পর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তদন্ত এবং ব্যবস্থার যে কথা বললেন তা এই মুহূর্তে কোনো কাজে আসবে বলে মনে হয় না।